আজ বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৮শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
আজ বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৮শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

তারেক রহমান পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী: বৃটিশ ম্যাগাজিন দ্য উইক

 

 

বৃটিশ সাপ্তাহিকী ‘দ্য উইক’ নিউজ ম্যাগাজিন চলতি সংখ্যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে নিয়ে কাভার স্টোরি করেছে। যার শিরোনাম ‘ডেসটিনি’স চাইল্ড’ বা নিয়তির সন্তান।

দ্য উইক ম্যাগাজিনের নয়াদিল্লি ব্যুরো চিফ নম্রতা বিজি আহুজা’র লেখা ওই শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক বিএনপি ভাঙার চেষ্টার বিপরীতে তারেক রহমানের নেতৃত্বেই দল ঐক্যবদ্ধ রয়েছে এবং তারেক রহমান পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে রয়েছেন, কারণ দিন দিন তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৫৭ বছর বয়সী তারেক এখন তার মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন, কারণ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার চেষ্টা করছে। পাঠকদের জন্য দ্য উইকের চলতি সংখ্যার কাভার স্টোরি ডেসটিনি’স চাইল্ডের ভাষান্তর করে তুলে ধরা হলো:

বাংলাদেশে পরিবর্তন তারেক রহমানের  জন্য একটি সুযোগ এনে দিয়েছে।বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হতে পারে। সমর্থকদের কাছে তিনি ‘তারেক জিয়া’ নামে পরিচিত। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে। মুক্তিযোদ্ধা ও সেনাবাহিনীর জেনারেল জিয়া বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালে বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তাদের হাতে নিহত হওয়ার পর খালেদা জিয়া দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদকে পতনের দিকে নিয়ে যায়।

৫৭ বছর বয়সী তারেক এখন তার মায়ের পথ অনুসরণ করছেন। কারণ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরায় শুরুর চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার পর বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ঢাকায় তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন।

বর্তমানে ভার্চুয়ালি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছেন তারেক রহমান। ঢাকায় নামার পর তার জীবনে পূর্ণ চক্র সম্পূর্ণ হবে। খালেদা জিয়া আশা করছেন, তারেকই আসন্ন নির্বাচনে দলের মুখ হিসেবে আবির্ভূত হবেন।

তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন, ‘তারেক ইতোমধ্যে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা করেছেন।’

বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা এবং তারেকের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, ‘চাকরি, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষক, শ্রমিক বা শ্রমজীবী যেই হোক না কেন, আমরা তাদের সমান সুযোগ, ন্যায্য মজুরি এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দিতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক ও উন্নয়নকেন্দ্রিক রাজনীতি গড়ে তুলতে তারেকের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়ন করতে চাই।’

এখন সব নজর থাকবে এ দিকে যে, কতটা দক্ষতার সাথে তারেক বাংলাদেশের নেতৃত্ব নিতে সক্ষম হবেন যখন তিনি ঢাকায় নামবেন। জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ বিন আলী বলেন, ‘তিনি নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, এবং সামরিক-প্রশাসনিক কর্তৃত্ব তার কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার নিয়েছিল যে তিনি ভবিষ্যতে আর রাজনীতিতে জড়াবেন না। এটি ছিল তার রাজনৈতিক অধিকারের লঙ্ঘন।’

১৬ বছরের নির্বাসনকালে তারেক ব্যক্তিগত ক্ষতির সম্মুখীন হন (তিনি তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে হারান) এবং বহু আইনি ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। তবুও, তিনি বিএনপিতে প্রভাবশালী থেকে যান এবং দলকে একত্রিত রাখেন। আসিফ আলী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক দল ভাঙার চেষ্টার বিপরীতে তারেক এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন।’

২০০৯ সালে দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২০১৬ সালে পুনর্নির্বাচিত হন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার মায়ের কারাবরণের পর থেকে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আসিফ আলী বলেন, ‘তারেক বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে রয়েছেন, কারণ তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।’

তারেক রহমান ১৯৮৮ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি ১৯৯১ সালের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করেন, কিন্তু পরে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না, যদিও বিএনপি সরকার গঠন করে। তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনী প্রচারে পুনরায় সক্রিয় হন এবং বিএনপি নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। এই সময়ে তিনি দলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব অর্জন করেন। তবে, মায়ের শাসনামলে তার বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ এবং সরকারে কোনো আনুষ্ঠানিক পদে না থেকেও ক্ষমতা প্রয়োগের অভিযোগ আনা হয়।

২০০৭ সালে, ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় এবং তারেক তার মায়ের সঙ্গে বন্দী হন। দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনকালে, অনেক শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হয়। তারেক ২০০৮ সালের নির্বাচন পূর্বে মুক্তি পান এবং চিকিৎসার জন্য প্যারোলে লন্ডনে যাওয়ার অনুমতি পান।

বাংলাদেশে পরিবর্তন তারেকের জন্য একটি সুযোগ, যাতে তিনি তার পূর্বসূরিদের ধারা ভেঙে নিজস্ব একটি উত্তরাধিকার তৈরি করতে পারেন। প্রশ্ন হলো, তিনি কেমন নেতা হবেন?

শেয়ার করুন
Share on Facebook
Facebook
Pin on Pinterest
Pinterest
Tweet about this on Twitter
Twitter
Share on LinkedIn
Linkedin