আজ বুধবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
আজ বুধবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত যে নেত্রী

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মানুষের ভালোবাসা ও আস্থার যে বিরল সম্মান তা খুব কম নেতাই অর্জন করেছেন। এক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়া নিঃসন্দেহে বিরল নজির গড়েছেন। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন এই নেত্রী শুধু দলীয় প্রধান নন—তিনি দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে এক জননেত্রীর প্রতীক, যিনি কখনো কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি এবং যিনি আপোষহীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার ব্যক্তিত্ব, মৃদুভাষী আচরণ, মানুষের প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা তাকে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

২৩ নভেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই সারাদেশে এক ধরনের উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। রাজনৈতিক অঙ্গনের মানুষ, তার দলের নেতাকর্মী—এসব তো ছিলই; কিন্তু আরও বিস্ময়কর ছিল সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া। কাজের মেয়ে, রিকশাচালক, দোকানদার, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, উপদেষ্টা—প্রায় সবার মধ্যেই ছিল এক ধরনের মানবিক উদ্বেগ ও শুভকামনা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেহেতু মতভেদ, বিতর্ক ও বিভেদের চিত্র প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়, তাই একজন নেত্রীকে ঘিরে এমন সম্মিলিত মানবিক প্রতিক্রিয়া বাস্তবেই নজিরবিহীন।

এই ঘটনা প্রমাণ করে একটি সত্য—বেগম খালেদা জিয়া শুধুই একজন রাজনৈতিক চরিত্র নন; তিনি মানুষের হৃদয়ে প্রোথিত এক মানবিক নেত্রী, যাকে সবাই নিজের মতো করে অনুভব করেন। তার অসুস্থতার খবরে যে জাতীয় স্তরের ঐক্য দেখা গেল, সেটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে খুব বিরল।

হাসপাতালে ভর্তির খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের চায়ের দোকান পর্যন্ত আলোচনায় উঠে আসে একটি প্রশ্ন—“খালেদা জিয়া কেমন আছেন?” যে দেশে প্রতিটি রাজনৈতিক ইস্যুতে তীব্র বিভক্তি থাকে, সেখানে একজন নেত্রীর জন্য এমন সার্বজনীন দোয়া ও প্রার্থনা নিঃসন্দেহে তার জনপ্রিয়তারই প্রতিফলন।

কাজের মেয়ে, যিনি হয়তো কখনো তার সামনে দাঁড়ানোর সুযোগও পাননি, তিনিও তার সুস্থতার জন্য দোয়া করেন। গ্রামাঞ্চলের কৃষক, শহুরে শ্রমিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরাও একই সুরে তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। এ যেন এক মানবিক স্রোত—রাজনীতির দেয়াল ভেদ করে মানুষের মমত্ববোধের সমবেত প্রকাশ।

বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তার মূল ভিত্তি কেবল তার রাজনৈতিক অবস্থান নয়; বরং তার ব্যক্তিত্ব, আচরণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধরণ এবং রাষ্ট্রনায়কের প্রজ্ঞা। জীবনের বহু কঠিন সময়ে তিনি যেভাবে ধৈর্য, নরম স্বভাব ও মৃদু হাসি বজায় রেখেছেন—তা সাধারণ জনগণের কাছে তাকে আরও আপন করে তুলেছে।

তার মাতৃসুলভ আচরণ, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা, ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের প্রতি বিশ্বাস, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল আস্থা—এসব বৈশিষ্ট্য তাকে শুধু রাজনৈতিক নেত্রী নয়, একজন মানবিক নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

এছাড়া পররাষ্ট্র নীতি থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ নীতিতে তার অভিজ্ঞতা ও বাস্তববাদী অবস্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছে। বহির্বিশ্বের কাছে তিনি একজন স্থিতিশীল, দৃঢ় এবং অভিজ্ঞ নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র ব্যক্তি বেগম খালেদা জিয়া যিনি জনগণের ম্যান্ডেট পেয়ে তিনবার দেশের সরকার প্রধান ছিলেন । এ অর্জন কোনো নেতার ক্ষেত্রে সহজ নয়। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন তাকে গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের অন্যতম আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

একটি বিশেষ তথ্য তার রাজনৈতিক অর্জনকে আরও শক্তিশালী করে—তিনি কখনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। এটি বাংলাদেশের কোনো বড় রাজনৈতিক নেতার ক্ষেত্রেই বিরল।

রাজনীতির কঠিন বাস্তবতায় তিনি এক ঐক্যের প্রতীক

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা অনেক বেশি বিভক্ত, সংবেদনশীল ও সংঘাতপূর্ণ। মতের ভিন্নতায় সমাজও বিভক্ত। ঠিক এই সময়ে একজন নেত্রীকে ঘিরে রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে সবার দোয়া একত্রিত হওয়া সত্যিকার অর্থে এক জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।
এতটাই জনপ্রিয়তা ও মানবিক গ্রহণযোগ্যতা খুব কম রাজনৈতিক নেতাই অর্জন করতে পারেন।

এ যেন প্রমাণ করে—রাজনীতি যতই বিভক্ত হোক, মানুষ মানবিকতায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে। আর সেই ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দুতে যে নেত্রী দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি হলেন বেগম খালেদা জিয়া।

তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা শুধু শহর-নগরেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও অনুভূত হয়েছে সমানভাবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে তার প্রতি যে আবেগ দেখা যায়, তা আসে তাদের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে।
তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে যে ধরনের জনবান্ধব নীতি গ্রহণ করেছিলেন—বিশেষত নারীশিক্ষা, দরিদ্র মানুষের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করা—এসব বিষয় মানুষ এখনো স্মরণ করে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের একজন গণতান্ত্রিক নেত্রী হিসেবে তার ভূমিকা, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মানবিক দৃঢ়তা, গণতন্ত্রের চর্চায় তার অবদান মানুষকে তার প্রতি সম্মানবোধে আবদ্ধ করেছে।

তার সর্বশেষ শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশজুড়ে এখনও উদ্বেগ রয়ে গেছে। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকার পাশাপাশি প্রতিদিনই তার সুস্থতার খবর জানতে মানুষ আগ্রহী। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা—দেশের এই জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একজন অভিজ্ঞ নেত্রী ও রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

মানুষ বিশ্বাস করে—তিনি সুস্থ হয়ে আবারও জনগণের মাঝে ফিরে আসবেন, নেতৃত্ব দেবেন এবং জাতীয় জীবনকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবেন। এই প্রত্যাশা রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দের বাইরে গিয়ে একটি জাতীয় অনুভূতিকে প্রকাশ করে।

বর্তমান সময়ে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা স্থিতিশীল নেতৃত্বের খুব বেশি প্রয়োজন। অভিজ্ঞতা, ধৈর্য, আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি যতটা দৃঢ় অবস্থান বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে দেখা যায়—তা মানুষকে আশাবাদী করে।
দেশের মানুষ যেভাবে তার সুস্থতার জন্য দোয়া করছে।
এই চিত্র আমাদেরকে এমন বার্তাই দিচ্ছে যে
বাংলাদেশের রাজনীতি যতই জটিল হোক, মানুষ এখনো নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মানবিক আবেগে সংহত থাকতে পারে।

শেষ কথা:
একজন নেত্রীর প্রতি জাতির এমন ঐক্যবদ্ধ ভালোবাসা ও প্রার্থনা শুধু রাজনৈতিক ঘটনা নয়—এটি মানবিকতারও বিরল দৃষ্টান্ত।
বেগম খালেদা জিয়া তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যে সম্মান, ভালোবাসা, গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা অর্জন করেছেন, তা তাকে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে এক স্থায়ী আসনে বসিয়েছে।

আজ অসুস্থতার মুহূর্তে পুরো দেশ তার জন্য দোয়া করছে—
যেন তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে আবারও মানুষের মাঝে ফিরে আসতে পারেন,
যেন তার অভিজ্ঞ নেতৃত্ব আবারও gজাতিকে আলোর পথে এগিয়ে নিতে পারে। তিনি সত্যিই মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত একজন নেত্রী—যার পাশে জাতি দল-মত নির্বিশেষে মানবিকতায় এক হয়ে দাঁড়িয়েছে।-লেখক:সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

শেয়ার করুন
Share on Facebook
Facebook
Pin on Pinterest
Pinterest
Tweet about this on Twitter
Twitter
Share on LinkedIn
Linkedin