আজ মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
আজ মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
বিশেষ মন্তব্য প্রতিবেদন

ড.ইউনুস বাতাসে কান পাতুন,চারদিকে বৈষম্যের ঝড়ো হাওয়া …

দেশের মানুষ কী বলছে? সময় থাকতে বাতাসে কান পেতে শুনুন ড.ইউনুস। চারদিকে আপনার সরকারের ব্যর্থতা-বিশৃংখলার আওয়াজ উঠছে। পুলিশ-জনপ্রশাসন এবং বাজার সিন্ডিকেট আগের মতোই বেপরোয়া। সবখানে বৈষম্যের তীব্র ঝড়ো হাওয়া বইছে। আপনার সরকারের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা (আপনার ভাষায়) সেই সমন্বয়কদের সমন্বয়হীন কথাবার্তা, আচার-আচরণ মানুষের মনে শুধু প্রশ্নের উদ্রেক করছে না বরঞ্চ ক্ষোভের সঞ্চার করছে। কেউ কেউ বলছে, এরা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার হাসিনার ছাত্রলীগের শূন্যস্থান দখল করেছে। সুতরাং আপনি এদের এখনই সামলান। আপনার সময় দ্রত ফুরিয়ে যাচ্ছে।

সরকারের মেয়াদকাল নিয়ে নানাজন নানা কথা বলছে। বিশেষ করে সম্পাদকরা নাকি আপনাদেরকে কমপক্ষে ২-৩ বছর ক্ষমতায় দেখতে চান। গত মাসে আপনার সঙ্গে বৈঠকের পর প্রেস সেক্রেটারী মিডিয়া ব্রিফিংয়ে কথাটা বিশেষ অঙ্গভঙ্গিতে এমনভাবে বলছিলেন যে, সরকার ৫ বছর বা আরো বেশীকাল থাকলেও সমস্যা নেই! ড.ইউনুস আপনার চারপাশে এরা কারা? এরা কি আপনাকে সঠিক তথ্য দিচ্ছে? তারা কি যথেষ্ট দক্ষ,জনবান্ধব?

একথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, আপনার সঙ্গে বৈঠকে যেসব সম্পাদক দীর্ঘ মেয়াদে আপনাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় বলে মত দিয়েছে, তারা আসলে মতলবাজ। তাদের অধিকাংশই স্বৈরাচার হাসিনার দোসর। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’ এর এজেন্ট। গত নির্বাচনের পূর্বে তারা ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে র’এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রমাণ ছাড়া আমি কথা বলছি না। কথিত এসব বাঘা সম্পাদকরা যে আপনার সরকার,গণতন্ত্র ও মানবতার শভাকাঙ্খী নয় এর বড় প্রমাণ হচ্ছে,তারা জুলাই গণহত্যায় সরাসরি মদদ দাতাদের সাংবাদিক দাবি করে তাদের হয়রানি না করতে বিবৃতি দিচ্ছে। যা কেবল অগ্রহণযোগ্যই নয়, নিন্দনীয়ও বটে। এদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিন।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে,একজন মতিউর রহমান চৌধুরী এবং একজন নূরুল কবীর ছাড়া গত দেড় দশকে আর কেউ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে পেশাদার ও কার্যকর সম্পাদকের ভুমিকা পালন করেনি।

এটা ভাল ওটাও মন্দ নয়: এমন চরিত্রের তথাকথিত সম্পাদকদের কথা শুনলে আপনার ভাবমূর্তিই শুধু ক্ষুন্ন হবে। হাসিনার পরিণতিও হতে পারে । আপনার চারপাশের হায়েনা-শকুনরা থাবা মেলে বসে আছে সুযোগের অপেক্ষায়। যে কোনো সময় পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। আপনার সরকারের প্রাথমিক নিয়োগকর্তারা আপনাকে রক্ষা করতে পারবেন কি না। তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ তারা নিজেরাই এখন চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
বিদেশী প্রভু আর তাদের দোসরদের সব কথায় কান দেবেন না। জরুরী কিছু সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দিন। সম্ভব হলে ৬ মাসের মধ্যে। না হলে এক বছরের মধ্যে অবশ্যই তা সম্পন্ন করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এর বেশী সময় কেউ আপনার সরকারকে দেবে বলে মনে হয় না।

তরুণদের রাজনৈতিক দলের ওপর ভর করে ক্ষমতা প্রলম্বিত করার কোনো অভিলাষ থাকলে এখনই তা পরিহার করুন। সমন্বয়কদের প্রটোকল দেয়ার জন্য যারা চিঠি দিয়েছিল। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন। প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ আপনার কাছে বৈষম্যহীন আচরণ প্রত্যাশা করে। নিজ যেগ্যতায় বিশ্ব দরবারে যে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেছেন। শেষ বয়ষে এসে কোনো অপশক্তির প্ররোচনায় তা ধ্বংস করবেন না প্লিজ । কথায় আছে বেশী ভাল ভাল নয়। আপনার সরকারের সাফল্য ব্যর্থতার হিসেব করলে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারি হবে অবধারিতভাবে।

৭ সদস্যে টীম নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যাওয়ার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাই। তবে এখানে অপ্রয়োজনীয়ভাবে নিজ কন্যাকে দলভুক্ত না করলে আপনি অরো মহিমান্বিত হতেন। আরব আমিরাতে বন্দি ৫৭ জন বাংলাদেশীকে মুক্ত করে আনা আপনার অভাবনীয় সাফল্য। ভঙ্গুর অর্থনীতিকে দাঁড় করাতে স্বল্প সময়ের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ প্রাপ্তিও আপনার সাফল্য। কিন্তু এর বাইরে শুধুই হতাশা। আমার মতো অধমের কথা না শুনলে আপনার কিচ্ছু হবে না। আমার কথা আপনার কান পর্যন্ত পৌঁছাবে কি না তাও জানি না।

তবু বিবেকের তাড়নায় দেশের ও আপনার একজন শুভাকাঙ্খী হিসেবে কথা বলছি। আপনার সরকারের কাছে আমার চাওয়া-পাওয়ার কিচ্ছু নেই। আমি এও জানি যে, ইতোমধ্যে স্তাবকেরা নিরাপত্তার অজুহাতে এবং নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে আপনার চারপাশে শক্ত দেয়াল তৈরি করেছেন। হাসিনার মতো দেয়ালবন্দি না থেকে আপনাকে এ দেয়াল ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে হবে। এখনো সময় আছে। বাস্তবতা মেনে জনগনের কাতারে দাঁড়ান। মানুষের মন জয় করতে চেষ্টা করুন।

এই সরকারের মেযাদকাল নিয়ে যে যাই বলুক। আপনাদের প্রতিটি ঘন্টা হিসেব করছে মানুষ। একটি বিশেষ সরকারকে মূল্যায়নের জন্য দেড় মাস সময় যথেষ্ট বলে আমি মনে করি। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, এটা কোনো স্বাভাবিক বা নির্বাচিত সরকার নয়। গত ক’দিনে বেশ খানিকটা সময় সচিবালয়ে কাটালাম। সরকারের আচার-অনুষ্ঠান,ভাব-সাব,চলন-বলন দেখে আমার একবারও মনে হয়নি যে এটা একটা বিশেষ সরকার। বেশিরভাগ উপদেষ্টা এখনো ফুল দেয়া-নেয়া মিটিং-সিটিং আর খোশ গল্প করেই পাড় করছেন দিনের উল্লেখযোগ্য সময়। আমি যদি এই সরকারের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ এক বছরও ধরি। তাহলে ইতোমধ্যে প্রায় ১৪ শতাংশ সময় ব্যয় করে ফেলেছেন।

পাঠক বলুন তো, এই সরকার কি কোনো ভুল করছে না? কিন্তু কোনো গণমাধ্যমে (সামাজিক মাধ্যম ছাড়া) কি সরকারের ভুল-বিচ্যুতি নিয়ে সংবাদ বিশ্লেষণ প্রকাশ করতে দেখেছেন? এদেশের মানুষের আবেগকে পুঁজি করে ক্ষমতাবানরা খেলে চলেছে নিরন্তর। পলাতক স্বৈরাচার হাসিনার ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় নীতি-নৈতিকতাহীন মিডিয়ার দায় অনেক বেশী। ক্ষমতার ললিপপ প্রেমী এই মিডিয়া দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবার নয়। কারণ মিডিয়া হচ্ছে একটি রাষ্টের চতুর্থ স্তম্ভ। এরা আগে হাসিনার পেছনে দৌড়াত। এখন ড.ইউনুসের পেছনে দৌড়াচ্ছে। আগামীতে অন্যজনের পেছনে দৌড়াবে। ললিপপ’র মায়া ছাড়তে না পারলে আমাদের মিডিয়া কখনো কারো সামনে দৌড়াতে পারবে না।

দুনিয়া কাঁপানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুথানে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার হাসিনার ভারতে পলায়নের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক-মানবিক এবং সার্বভৌম-শক্তিশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়ে ছিল তা যেন ফিকে হতে শুরু করেছে। যা খুবই বেদনা এবং দুর্ভাগ্যের বিষয়।
এখানে ড.ইউনুস সরকারের কয়েকটি মারাত্মক ভুল-অবহেলা এবং অক্ষমতার কথা উল্লেখ করতে চাই। দেখুন,সকল কাজই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলে সব কাজকে অগ্রাধিার দেয়া হলে বৈষম্য সৃষ্টি হবেই । প্রশ্ন ওঠবেই। অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে বাস্তবতার আলোকে। কারণ প্রতিটি কাজ বা দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার বিবেচনায় নেয়াটা ন্যায়বিচার তথা বৈষম্যহীনতার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।

এই সরকার যাদের রক্তের ওপর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেইসব বীরদের প্রতি চরম অবহেলা করেছে। দিনাজপুরের একজন গুলিবিদ্ধ দিনমজুর চিকিৎসার খরচ মেটাতে না পেরে ৩ দিনের সন্তানকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত অনেকের স্বজন ওষুধ কেনার টাকা না থাকায় হাহাকার করছেন। চোখের পানিতে বুক বাসিয়েছেন। কিন্তু সরকার শুধু তাদের বেডচার্জ মওকুফ করেই দায়িত্ব শেষ করেছেন। এছাড়া আহতদের ১ লাখ এবং নিহতদের জন্য ৫ লাখ টাকার সরকারি সাহায্য ঘোষণা করা হয়েছে। এটা খুবই সামান্য টাকা। উনাদের জন্য অবিলম্বে মাসিক ভাতা ও সম্মানী ঘোষণার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

যারা মনযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার কথা ছিল সেইসব বীর শহীদ পরিবার ও আহতদের সঙ্গে কার্যত নিষ্ঠুর ও বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে এই সরকার। আমরা ভুলে যাইনি যে দায়িত্ব গ্রহণের শুরুর দিকে ড. ইউনুস আহতদের হাসপাতালে দেখতে গিয়ে সমস্ত খরচ সরকার বহন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্ত গত দেড় মাসেও তার এ কথার বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাইনি। এতদিনেও শহীদ ও আহতদের তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেনি সরকার। আর আমাদের সমন্বয়করা জাতিকে উদ্ধারের জন্য দেশ চষে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আহতদের মনোবল বাড়ানোর জন্য পাশে দাঁড়াবার এতটুকুু সময় তাদের নেই।

আচ্ছা বলুন তো, সরকার কি এদের দেখভালের জন্য ছাত্র-জনতা ও সরকারী লোকদের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে পারত না? সেলের সদস্যরা যদি নিয়মিত হাসপাতাল যেত। আহতদের সান্তনা দিত,মাথায় হাত বুলাত। তাহলে চোখ হারানো, হাত-পা হারানো কিংবা গুলিবিদ্ধ বীর সৈনিকরা দ্রæত সুস্থ হয়ে উঠত। তারা ভাবত যে,আমাদের এ ত্যাগ বৃথা যায়নি। যে স্বপ্ন নিয়ে স্বৈরাচার হাসিনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ক্ষমতার পালাবদলে রাষ্ট্র তাদের ভুলে যায়নি। তারা একা নন। এটাই আমাদের নতুন বাংলাদেশ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, যে কোনো শারিরীক সুস্থতার জন্য দরকার মানসিক শক্তি। কিন্তু হায়! আমরা কী দেখলাম? মানসিক শক্তি দুরে থাক। ওষুধের সামান্য টাকা যোগান দিতেও তারা ব্যর্থ। এজন্য কত টাকা খরচ হতো। ্এ টাকা কি রাষ্ট্রের নেই। তাহলে শহীদদের স্মরণসভার নামে ৫ কোটি টাকা কেন বরাদ্ধ দেয়া হল। কাকে সুবিধা দেয়ার জন্য আপনার সরকার এসব করছে।

ফ্যাসিবাদ পতনের দেড় মাস পরও সারাদেশের নাগরিকদের মধ্যে এখনো নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে। নিত্য পন্যের দাম বাড়ছে। রাজধানীতে ১০ মিনিটের রাস্তা পেরোতে কখনো লাগছে ১-২ ঘন্টা। মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। একই দিন দু’টি বিশ্ববিদ্যাালয় এবং খাগড়াছড়িতে মব জাস্টিসর শিকার হয়ে ৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সরকারের বেধে দেয়া নিত্যপন্যের দাম বিক্রেতারা মানছে না। উপরন্তু বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভারতে আর ইলিশ রপ্তানি হবে না মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টার এমন ঘোষণায় মানুষ আশা করেছিল যে এবার বুঝি পাতে ইলিশ উঠবে। কিন্তু না। আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আমাদের সবার প্রিয় এ জাতীয় মাছটি।এসব অরাজকতা বন্ধে সরকারের দৃশ্যমান ও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।

এদিকে পুলিশ-জনপ্রশাসনে সিন্ডিকেট ফ্যাসিবাদ আমলের মতোই বেপরোয়া আচরণ করছে। তাও দেখার যেন কেউ নেই।
সম্প্রতি পত্রিকার খবরে জানা যায় যে পুলিশের পোস্টিংয়ের বিষয়টি হাসিনা সরকারামলের মতো একটি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। আইজিপি চলছে তার অধিনস্তদের কথায়।এ বিষয়ে জানতে আইজিপিকে ফোন করলাম। হটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠালাম। কোনো সাড়া নেই। তার পিএস এবং স্টাফ অফিসারকে ফোন করলাম। হটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠালাম। তাতেও কোনো জবাব নেই। পিএস আবশ্য পাল্টা বর্তায় এআইজি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার জন্য সদয় পরামর্শ দিয়েছেন। এজন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। কিন্তু উনার পরামর্শ মেনেও বিফল হলাম। ফ্যাসিবাদ সরকারের কোনো আইজিপির সঙ্গে কথা বলতেও এতটা গলদঘর্ম হতে হয়নি কখনো। বিশেষ করে ১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় সকল আইজিপিকেই কম-বেশী জনবান্ধব মনে হয়েছে।

সহযোগিদের প্রকাশিত খবরানুযায়ী পুলিশে বৈষম্যের তালিকা এখন আরো দীর্ঘ হচ্ছে। য অত্যন্ত ভয়ংকর ব্যাপার। আমার ৩ দশকের সাংবাদিতার ক্যারিয়ারে প্রায় ২০ বছর ধরে কিছু পুলিশ অফিসারকে দেখে আসছি। সরকার বদল হলেও তাদের আচরণ ও পেশাদারিত্বে কোনো পরিবর্তন দেখিনি। যখন যেখানে দায়িত্ব পেয়েছেন সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন। সব রকম যোগ্যতা থাকার পরও তারা কম গুরুত্বপূর্ণ ডেস্কে কাজ করেছেন। কিন্তু এ নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো আফসোস দেখিনি। বরঞ্চ তারা মহান সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করেছেন। শুক্রিয়া করেছেন।

আমার জানামতে পুলিশে এমন অনেক কর্মকর্তা আছেন, ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে যাদের দূরতম সম্পর্ক নেই। পেশাগতভাবেও তারা দক্ষ এবং মেধাবী। নৈতিক মান বজায় রাখতে তাদেরকে সর্বদাই তৎপর-আপোষহীন মনে হয়েছে। সেবা প্রার্থী মানুুষের সঙ্গে সদাচারণের জন্যও তাদের খ্যাতি রয়েছে। তবু তারা চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন অনেক বছর ধরে। আমাদের সরকার বা পুলিশ কর্তৃপক্ষ যদি সত্যিই একটি জনকল্যাণমূলক পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে চাইতেন। তাহলে এসব কর্মকর্তারাই থাকতেন পুলিশের অগ্রভাগে বা নেতৃত্বে। কিন্তু স্বার্থান্বেষী শাসক গোষ্ঠী খুব ভাল করেই জানে যে কোনো সৎ নীতিবান পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে তাদের অনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করা সম্ভব নয়।

সম্প্রতি পত্রিকার খবরে ওএসডির তালিকায় দু’টি নাম দেখে চমকে উঠি। ডিআইজি নাফিউল ইসলাম এবং আব্দুল কুদ্দুস আমিন। দু’জনই এসবি পুলিশে কর্মরত ছিলেন দীর্ঘকাল ধরে। তাদের ওএসডি হওয়ার বিষয়ে আইজিপি.সরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা সরকারের কাছে আমি বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাই। তাদের সততা এবং পেশাদারিত্ব নিয়ে কেউ কি প্রশ্ন তুলতে পারবে? বিশেষ করে নাফিউল ইসলামের মতো সৎ,মেধাবী ও দক্ষ ক’জন পুলিশ কর্মকর্তা আপনাদের বাহিনীতে আছে? পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি কাজী জিয়া উদ্দিন এবং পুলিশ স্টাফ কলেজের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ সোহেল রানা। তাদের মতো বুদ্ধিদীপ্ত,সৎ ও জনবান্ধব চৌকস কর্মকর্তা পুলিশ বাহিনীতে খুব বেশী আছে বলে আমার জানা নেই।

এদিকে, স্বৈরাচার হাসিনা সরকার পতনের পর রাতারাতি রং বদল করছে কিছু সুযেগ সন্ধানী পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের বেপরোয়া আচরণে বিব্রত পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। পতিত স্বৈরাচারামলের মধ্যম সারির পুলিশ কর্মকর্তা প্রলয় জোয়ার্দারের বেপরোয়া আচরণ ছিল একটি বহুল আলোচিত বিষয়। ক্ষমতার পালাবদলের পর একই কাজ করছে পদোন্নতি বঞ্চিত কতিপয় কর্মকর্তা। এদের মধ্যে দু’একজন রাজনৈতিক করণে পদোন্নতি বঞ্চিত হলেও বেশির ভাগ কর্মকর্তারই পদোন্নতি হয়নি অভ্যন্তরীণ নানা কারণে। ৫ আগষ্টের বিকেল পর্যন্ত এ সকল পদোন্নতি বঞ্চিতরা আ.লীগের সঙ্গে গলা মিলিয়ে কাজ করেছেন বলেও জানা গেছে। সহযোগী পত্রিকার খবর বলছে, সিন্ডিকেট নেতা ডিআইজি আবু নাসের খালেদ আওয়ামী লীগ আমলে পদোন্নতি পান নি দুর্নীতির কারণে। আপরদিকে ডিআইজি সরদার তমিজুদ্দি নারী কেলেঙ্কারি ও স্ত্রীর করা মামলার কারনে পদোন্নতি বঞ্চিত হন। অথচ তারাই এখন রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিত বলে দাপট দেখাচ্ছেন।আর সত্যিকার রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিতরা এখনো বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ তাদের টাকার জোর নেই। এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হলেন পুলিশ সুপার মো: আবদুল্লাহ আল মামুন। ২০০৮ সাল থেকে হেডকোয়ার্টারে। এক বারের জন্যও পদায়ন হয়নি। কারণ তিনি আ.লীগ বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত। গত ১৮ আগস্ট জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর পদোন্নতি বঞ্চনার কথা উল্লেখ করে আবেদন করলেও কোনো ফল হয়নি|

অন্যদিকে বিএনপির নাম ব্যবহার করে হাওয়া ভবনের সাবেক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বকুলের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে বলে কয়েকটি পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই সিন্ডিকেটে সাবেক ডিআইজি,ওসি ডিএমপি ও পুলিশ হেডকোয়ার্র্টারের কয়েকজন ডিআইজি যুক্ত আছেন বলে বেশ আলোচিত হচ্ছে। এব্যাপারে বকুলের বক্তব্য জানতে ফোন ও ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তার কোনো উত্তর মেলেনি।

পুলিশের মতো জনপ্রশাসনেও চলছে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা। বড় চেয়ারে বসতে সবাই নিজেকে হাসিনা সরকার বিরোধী হিসেবে জাহির করতে ব্যস্ত। অথচ ৫ আগস্ট বিকেল পর্যন্ত তারা মুজিব সেনা বলে গর্ব করতেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এপিডি (নিয়োগ, পদায়ন ও প্রেষণ) অনুবিভাগের এপিডি হয়েছেন অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রউফ। এই অনুবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দুটি যুগ্ম সচিব পদে নিয়োগ পান সদ্য পদোন্নতি পাওয়া দুই যুগ্ম সচিব বিসিএস ২০ ব্যাচের কর্মকর্তা ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ এবং কে এম আলী আযম। তারা বিএনপি-জামায়াত ঘরানার হিসেবে পরিচিত। এই দুই কর্মকর্তা শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরদিনই দুই দপ্তরে বসে অফিস শুরু করেন। অতি সম্প্রতি দেশের ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগে এ দুজনের হাত আছে বলে মনে করেন ‘বঞ্চিতরা’। তাঁদের দাবি, এই দুই কর্মকর্তা অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে প্রশাসনে বদলি-পদায়নে বড় ভূমিকা পালন করছেন।

কর্ম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন পেশাদার ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার খ্যাতি রয়েছে বিসিএস সাধারণ ক্যাডারের ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তা ফাইজুল হকের। কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনার শাসনামলে কয়েক দফায় পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন আমার দীর্ঘ দিনের চেনা-জানা এই কর্মকর্তা। মেধা ও জ্যেষ্ঠতা লঙ্গন করে জুনিয়র কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে বদলী-পদায়ন করলেও ফাইজুল হককে প্রেষণে দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা করে রাখা হয়েছে। এ পদটি মূলত একজন উপ সচিব পদ মর্যাদার। অথচ তার মূল পদ হচ্ছে অতিরিক্ত প্রধান তথ্য কর্মকর্তা বা মহাপরিচালক পদ মর্যাদার। এদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন সরকার গঠনের পর ফাইজুল হক বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ ভূতাপেক্ষভাবে বিধি মোতাবেক পদোন্নতি প্রদানের জন্য গত ৮ আগষ্ট মন্ত্রীপরিষদ সচিব বরাবর আবেদন করেন। অনুলিপি দেন জনপ্রশাসন ও তথ্য সচিবকে। কিন্তু পূর্বের মতো আবারো বঞ্চিত করা হয় ফাইজুল হককে।

জনপ্রশাসনের যেসব কর্মকর্তাকে দীর্ঘ সময় ধরে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও সততার সঙ্গে কাজ করতে দেখেছি। তাদের অনেককেই এখন শাস্তি পেতে দেখে কষ্ট পাচ্ছি। সত্যিই কষ্ট পাচ্ছি। এক সময় স্বৈরাচার হাসিনার এপিএস ছিলেন তিনি। কিন্ত ২১ সালে তাকে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সিন্ডিকেটের কাছে হার মানতে হয়। তাকে বদলী করা হয় সচিবালয়ে। সারা জীবন সততার সঙ্গে কজ করলেও এখন এই যুগ্ম সচিবের নামে কথিত মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে ভিত্তিহীন অপবাদ। তার একমাত্র অপরাধ তিনি শেখ হাসিনার এপিএস ছিলেন। নৈতিকতা বিরোধী এসব মিডিয়ার অপপ্রচারের কথা কে না জানে। ঢাকার সাবেক জেলা প্রশাসক ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক শহীদুল ইসলাম। তার পেশাদারিত্ব এবং আন্তরিকতাপূর্ণ সেবার কথা কখনো ভুলতে পারবো না। তাকে ওএসডি করেছে বৈষম্যবিরোধী সরকার। অথচ হাসিনা সরকারের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ অগনিত কর্মকর্তারা এখনো বহাল তবিয়তে। পাঠক কী বুঝলেন?

শেষ কথা: পূর্বের ন্যয় সর্বত্রই বৈষম্য চলছে সগৌরবে। এখানে কেবল চেহারা বদল হয়েছে। চরিত্র বদলায়নি মোটেও। আমাদের প্রিয় ড. ইউনুস আপনার সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ, দেশ-সমাজের জন্য কল্যাণকর,সৎপরায়ণ অথচ বঞ্চিত,অন্যায়ের শিকার মানুষগুলোর অব্যাক্ত আর্তনাদ মনোযোগ দিয়ে শুনুন। দ্রæত ব্যবস্থা নিন। আপনার সরকারেও যদি ফ্যাসিবাদের দোসর দুর্নীতিবাজরা সামনের সারিতে স্থান পেয়ে যায়। তবে এত রক্তের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশের কী হবে?-লেখক: সাংবাদিক,ঢাকা।

 

শেয়ার করুন
Share on Facebook
Facebook
Pin on Pinterest
Pinterest
Tweet about this on Twitter
Twitter
Share on LinkedIn
Linkedin