গৃহযুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড খ্যাত উপদেষ্টা মাহফুজ আলম! চূড়ান্ত বিপ্লবের হুমকি দিয়েছেন আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ! আর এই সরকারের নিয়োগ কর্তা খ্যাত সমন্বয়করা বিতর্কিত ইসলামিস্টদের সঙ্গে কোরাস গাইছেন। তারা অপ্রাসঙ্গিকভাবে বিএনপির সমালোচনা করছেন। ইনিয়ে-বিনিয়ে তারা জাতিকে এটাই গেলাতে চাইছেন যে, বিএনপি ফ্যাসিস্ট আ.লীগকে পুনর্বাসন করতে চায়। কী আশ্চর্য! জুলাই অভ্যুত্থানে সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছে বিএনপি।ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৪২২ জন নেতাকর্মী অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন।আন্দোলনের একদম শুরুর দিকে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ তরুণই ছিল ছাত্রদলের নেতা।কিন্তু অভ্যুত্থানের নায়ক দাবিদাররা এবং সরকারের উপদেষ্টারা ভুল করেও বিএনপির আবদানের কথা মুখে আনছে না।
উপরন্তু, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস এক পা এগিয়ে গিয়ে বলেছেন যে, আ.লীগকে নাকি নির্বাচনে চায় বিএনপি! তিনি এও বলেছেন যে বিএনপি যেহেতু একটি বড় দল, তাই তারা চাইলে সরকারের কিছু করার নেই। ওদিকে টাইম ম্যাগাজিনকে (আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে) দেয়া সাক্ষাতকারে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আ.লীগকে বিচারের পরই নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে। তাহলে তিনি এখানে বিএনপিকে কেন টেনে আনলেন?
প্রকৃত সত্য হচ্ছে, সরকার শুরু থেকেই কোনো না কোনো উপায়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। আমার আগের লেখায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করেছি। কার্যত সরকার ফ্যাসিস্ট’র দোসরদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছে। সরকারকে তারা পেছন থেকে টেনে ধরে রেখেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, সরকার কেন এ চক্র ভেদ করে বেরুতে চাইছে না?
এখানে স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন করা যায় যে, আ.লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় ভিকটিম কে? বিএনপি নাকি অন্য কেউ? তাহলে বিএনপি কেন আ.লীগকে নির্বচনে চাইবে? এ ছাড়া হাসিনার ফ্যাসিবাদের সঙ্গে বিএনপির মতো একটি উদার গণতান্ত্রিক দলকে টেনে আনার মতলবটা কী? সার্বিক অবস্থা দেখে মনে হয়, সরকার ও তাদের মিত্রদের একমাত্র কাজই হচ্ছে, বিএনপির লেজ ধরে টানাটানি করা। যা দেশের জনগন মোটেও ভাল চোখে দেখছে না। এ ক্ষেত্রে শুরু থেকেই দু’টি পত্রিকার ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠেছে। ভারতীয় র’ এর মদদপুষ্ট পত্রিকা দু’টি বিএনপির পান থেকে চুন কষলেই তা ফলাও করে প্রচার করছে।
অপরদিকে বিভিন্ন অভিযোগে বিএনপি যে তার হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। যেখানে বাদ পড়ছে না কেন্দ্রীয় নেতারাও । যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এ বিষয়ে তারা একদম চুপ। এমন সস্তা ভন্ডামীর মানেটা কী? নির্বাচন প্রশ্নেœ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনেকবার বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ রাজনীতি বা নির্বাচন করবে কিনা, তা ঠিক করবে জনগণ।
আমি আগেও বলেছি যে, পর্দার অন্তরালে যত খেলাই হোক না কেন। খুনি হাসিনার ক্ষমা প্রার্থনা ও ফ্যাসিস্টদের বিচার ছাড়া কোনো ধরনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এদেশের মানুষ মানবে না। পাশাপাশি এখানে স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন উঠতে পারে যে,আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছিল, তারা (রাজাকার-আলবদর,আলশামস) এবং তাদের দল কি এখনো ক্ষমা প্রার্থনা করেছে? তাহলে তারা কি করে অবাধে রাজনীতি করছে? ২৪’র মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে কী করে পরম বন্ধুর মতো বুকে টেনে নিচ্ছে? এসব প্রশ্নের আশু মীমাংসা অত্যন্ত জরুরী বলে আমি মনে করি।
ইউনুস সরকারের সৌভাগ্য যে, বিএনপির মতো একটি অসাম্প্রদায়িক ও উদার গণতান্ত্রিক দলকে তারা তাদের পাশে পেয়েছেন। এ জায়গায় আ.লীগ হলে তারা এই ১০০ দিনেই টের পেয়ে যেতেন ‘কত ধানে কত চাল’। আরো সৌভাগ্য যে, বেগম খালেদা জিয়ার মতো অবিসংবাদিত নেত্রী এবং তারেক রহমানের মতো দৃঢ়চেতা- দেশপ্রেমিক নেতা আর মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো অতুলনীয় রাজনীতিবিদ এখন পর্যন্ত সরকারের প্রতি সমর্থন আব্যাহত রেখেছেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সরকার গঠনের পরই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছিলেন,‘ড.ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। তবে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার যাতে নিজেরাই নিজেদের ব্যর্থতার কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সে ব্যাপারে তাদেরকেও সতর্ক থাকতে হবে।’
৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর ৩ দিন দেশে কোনো সরকার ছিল না। সে সময় দেশ ও জাতির শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় বিএনপির অসাধারণ ভুমিকার কথা আমরা ভুলে যেতে পারি না। বিশেষ করে এর পেছনের কারিগর ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। হাসপাতালের বিছানা থেকে বেগম জিয়া এবং লন্ডন থেকে তারেক রহমান অগনিত নেতা-কর্মীকে ভিডিও বক্তৃতায় ধৈর্য্য ধারণের আহবান জানান। আর মহাসচিব মীর্জা ফখরুল তা বাস্তবায়নে ছিলেন অতন্দ্র প্রহরীর মতো। এতে দেড় দশক ধরে হাসিনার জুলুম-নির্যাতনের শিকার মানুষগুলো প্রতিশোধের আগুন বুকে নিয়ে থমকে দাঁড়ান। এর ফলে হাসিনা-কাদেরের ভাষ্য অনুযায়ী দেশে রক্ত গঙ্গা বয়ে যায়নি। ১০ লক্ষ্য মানুষও খুন হয়নি।
আর যাই হোক,অন্তত এ কারণে হলেও বিএনপির প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ।
পাঠক বলুনতো, এখানে বিএনপি ও মীর্জা ফখরুলের জায়গায় যদি আ.লীগ এবং ও.কাদের হতো। তাহলে দৃশ্যপট কেমন হতো? ও.কাদের সরকারকে কি বলতে পারত একটু কল্পনা করা যাক। হয়ত বলত,‘সরকারি প্রটোকল আর এসি রুমে বসে বসে মাংস-পোলাও খেয়ে এরা (উপদেষ্টারা) জনগনের কথা ভুলে গেছে। তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিয়ে দিলে তো আর এত আয়েশী জীবন ভোগ করতে পারবেন না। তাই ট্রেন এমনই আস্তে চালাচ্ছেন যে, চার বছর লাগবে ষ্টেশনে পৌঁছতে। আমি সরকারকে বলে দিতে চাই… যদি ভাল চান তবে আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে বাড়ী ফিরে যান। না হলে আপনাদেরকে ট্রেইনে তুলে বঙ্গোপসাগরে ফেলা হবে’।
পাঠক, ‘কাউয়া কাদের’ খ্যাত ওবায়দুল কাদেরের ‘কাল্পনিক সংলাপ’ আপনাদের পছন্দ না হলে ক্ষমা করবেন।
অন্যদিকে,ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের রূপরেখা না দেওয়ায় আশাহত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন যে, ‘দ্রুত নির্বাচন হওয়াটা দেশের জন্য মঙ্গল। নির্বাচন যত দেরি হবে সমস্যা তত বাড়বে। কেন বলছি, সেটা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে। এই ধরনের সরকার যতদিন বেশি থাকে তত সমস্যা তৈরি হবে। কারণ অন্তর্র্বর্তী সরকার নির্বাচিত নয়, তাদের তো ম্যান্ডেট নেই। এর পেছনের শক্তিটা কোথায়? এজন্য এ সরকারকে চিন্তা করতে হবে, যে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো নিয়ে আমরা কথা বলছি, সেগুলো যৌক্তিক সময়ের মধ্যে করতে হবে। এমন সময় যেন না নেন, যে সময় নিতে গেলে জনগণের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হবে যে, আপনি ক্ষমতায় থেকে যেতে চাইছেন। কারণ সেসব অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে ফখরুদ্দীন-মঈনউদ্দিনের সরকার কিংস পার্টি করার চেষ্টা করেছিল, ক্ষমতায় থেকে দল করবে, মানুষ সেটা মেনে নেয়নি। তারা নির্বাচন দিয়ে পালিয়েছিল।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের এমন ভদ্রোচিত-যৌক্তিক প্রতিক্রিয়ার পর সরকারের উপদেষ্টারা যে মনোভাব-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তা খুবই ভয়ংকর,অ-কল্পনীয়। কার্যত এর মধ্য দিয়ে দেশকে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরভিসন্ধি জাতির সামনে খোলাসা হয়ে পড়েছে বলেই আমি মনে করি।
প্রশ্ন হচ্ছে, জাতিকে গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং মুক্তির কথা বলে এখন দেশকে অন্ধকারের দিকে টেনে ধরার প্রয়াস কেন নিল সরকার। তারা কি ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে গেল? তারা কি মানুষের মনোভাব বুঝতে পারছে না? নাকি সংস্কারের বাহানায় বিদেশী প্রভুদের স্বার্থ হাসিল করাই সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠেছে?
পতিত স্বৈরাচার হাসিনা নির্বাচনে ২/৩ শতাংশ ভোট পেত। কিন্তু কাগজে কলমে দেখাত ৪০% বা আরো বেশী। আর বড়াই করে বলত যে, ‘বিএনপির মতো ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসিনি। ১৮ কোটি মানুষ যতদিন চাইবে। আমি ততদিন ক্ষমতায় থাকব’। আত্মাহংকার ও মিথ্যাচার হয়ে ওঠেছিল হাসিনার প্রধান অলংকার। আরো বলত, তার কাছে যাদু আছে। তাকে কেউ হটাতে পারবে না। কিন্তু বিধিবাম। যাদুর প্রভাব কেটে যাওয়ার পর হাসিনা নিজেকে আবিষ্কার করলেন ভারতের আশ্রিতা হিসেবে। জনগণের সঙ্গে শঠতা-প্রতারণার ফল এমনই হয়।
ভাবছি, তবুও কেন ইউনুস সরকার হাসিনার পথেই পা বাড়াল? ড. ইউনুস কেন নির্বাচন প্রশ্নে মিথ্যার আশ্রয় নিলেন? নিজেদের অক্ষমতার দায় কেন বিএনপির ওপর চাপালেন? সরকারের কাছে আমার প্রশ্ন, ও.কাদেরসহ হাসিনার দোসরদের নিরাপদে দেশ ত্যাগের সুযোগ কি বিএনপি করে দিয়েছে? হাসান মাহমুদ,আরাফাত, পুলিশের মনিরুল,হারুন ও বিপ্লবের মতো শীর্ষস্থানীয় অপরাধীদের নির্বিঘœ পলায়নে হাজার কোটি টাকা লেন-দেনের কারবারও কি বিএনপি করেছে? অভ্যুত্থানের ৩ মাস পর হাত-পা ও চোখ হারানো মানুষগুলোকে চিকিৎসার দাবিতে কেন রাস্তায় নামতে হল? চিকিৎসার অবহেলায় প্রায় ১শ’ দিন ভোগার পর অভ্যুত্থানের বীর সেনানী আবদুল্লাহর মৃত্যুর দায় কার? ৩ কোটি টাকার ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসি পদায়ন ও নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠল কেন? এসবের তদন্ত রিপোর্ট কোথায়? টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মানুষ খালি হাতে ফিরছে কেন? দাবি-অবরোধে পথচারীদের দুর্ভোগ বাড়ছে কেন? ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেড়েই চলছে কেন?
উল্লেখ্য,রোববার অন্তর্র্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না’।
এদিকে, আজারবাইজানের রাজধানী বাকুকে জলবায়ু সম্মেলনের ফাকে আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্র্বতী সরকারের মেয়াদ সর্বোচ্চ চার বছর হতে পারে’।
অপরদিকে,ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলকে আগামী নির্বাচনে চায় বিএনপি।’ কিন্তু বিএনপি মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন। ড.ইউনুস এখন আপনি কি বলবেন?
আমি মনে করি, জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ড. ইউনূস নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করে জনদাবি সম্পূর্ণরুপে উপেক্ষা করেছেন। ১৬ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত এদেশের মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছেন। অথচ সরকার তা আমলেই নিচ্ছে না। জনদাবি উপেক্ষার এ ঘটনা থেকে সচেতন মহলে প্রশ্ন ওঠছে যে,এই সরকারের মধ্যে কি স্বৈরাচারের ভুত চেপে বসেছে?
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সরকারের সাফল্যের গতানুগতিক বর্ণনা ছাড়া কোনো বিশেষত্ব খুঁজে পেলাম না। ব্যর্থতার জন্য কোনো আতœসমালোচনাও নেই।
এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, সরকার ইতোমধ্যে জনগণকে ক্র্যাজি দর্শক ভেবে নিজেদেরকে পতিত হাসিনার মতো সুপার স্টার অভিনেতার আসনে বসিয়েছেন। ভাবছেন, তারা যা করবেন, যা বলবেন। জনগণ তা-ই বসে বসে দেখবে আর মারহাবা বলে জয়োধ্বনি দেবে!
রোববার রাতে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নিজের ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘গৃহযুদ্ধের পূর্ববর্তী মুহূর্তে একটা ‘সামাল দেয়া’ প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, যা এখনো চলমান। কিন্তু, এ যুদ্ধ তো হবেই কোনো না কোনো ফর্মেটে।’ পুরানো বন্দোবস্তের প্রতি দাসখত লিখে দেয়া লোকেরা আবারো ঐক্যবদ্ধ হবে। এ দল, ঐ দল এখানে মুখ্য নয়। মুখ্য হল পুরাতন প্রজন্ম ও বন্দোবস্ত। ছাত্র-তরুণদের জন্য একটি সুযোগ এসেছে। প্রতিটি প্রজন্মের কাছেই এরকম একটি সুযোগ আসে। ‘৯০ এর ছাত্র-তরুণ খরচ হয়ে গেছে আগেজার প্রজন্মের ধূর্তামির কাছে। আবারো সে ধূর্ত পুরাতনপন্থীরা ছাত্র-তরুণদের মধ্যে যে বিভেদ ও অনাস্থা তৈরি করছেন, সে সম্বন্ধে ছাত্র-তরুণেরা সতর্ক না থাকলে তারা প্রজন্ম আকারে হত্যাযোগ্য হয়ে উঠবেন। কারণ, ‘৯০ এত রক্তাক্ত এবং কনফ্রন্টেশনাল ছিল না।’
আরো অনেক আপত্তিকর কথা-বার্তা বলেছেন। যা সংবিধান লংঘনের শামিল বলে আমি মনে করি। স্মরণ করা যেতে পারে যে. সংবিধান রক্ষা ও সংরক্ষনের শপথ নেয়ার ১২ ঘন্টার মধ্যে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি অপসারন করে সংবিধান লংঘন করেন। পাঠক কী বুঝলেন?
গৃহযুদ্ধ হবেই হবে! কোনো দল এখানে মুখ্য নয় বরঞ্চ ধূর্ত বলে গাল দিয়ে পুরনোদের মুছে ফেলার বার্তা দিয়েছেন! খরচ হয়ে গেছে বলে ৯০ এর ছাত্র-তরুণদের প্রতি চরম অবজ্ঞা করেছেন! ৯০ এত রক্তাক্ত এবং কনফ্রন্টেশনাল ছিল না বলে তারা ব্যর্থ! তাই এবার তিনি রক্তাক্ত ও দ্ব›দ্বপূর্ণ গৃহযুদ্ধের জন্য ছাত্র-তরুণদের আহবান করছেন! কি অবিশ্বাস্য-অবর্ণনীয় হুমকি!
মাষ্টারমাইন্ড খ্যাত এই উপদেষ্টার মধ্যে আমি শেখ মুজিব ও খুনী হাসিনার অবয়ব দেখতে পাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে তাকে আরো বেশী আগ্রাসী মনে হচ্ছে। কারণ,শেখ মুজিব-হাসিনা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে এক পর্যায়ে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠেন। কিন্ত মাহফুজ আলম অভিষিক্ত সিনেমার হিরোর মতো একটু প্রশংসিত হয়েই নিজেকে তিনি মহানায়ক ভাবতে শুরু করেছেন। যা ফ্যাসিজমের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।
মান্যবর উপদেষ্টা মহোদয় দু-চার দিনের জন্য নিজের পরিবার-সংসারের হাল ধরেছেন কি না। তা জানতে পারিনি। কিন্তু তার কথা-বার্তা ও আচার-আচরণে মনে হচ্ছে,এ ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতা একদমই নেই। তবে এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ তার বয়সই বা কতো? কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি এখন রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন।
আমি তার কথাবর্তায় চরম পন্থা ও জঙ্গিবাদের গন্ধ পাচ্ছি। এসবের পেছনে আমাদের উদীয়মান অর্থনীতি ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকতে পারে। এতে বিদেশী প্রভুদের হাত রয়েছে বলেও আমি মনে করি। এ ব্যাপারে ছাত্র-তরুন,শিক্ষার্থী এবং সমাজের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। কথায় বলে, ‘সুখে থাকতে ভুতে কিলায়।’
তবে আমি অত্যন্ত বিষ্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম যে, তরুন ও বিপ্লবী এই উপদেষ্টার বক্তব্যের দু’দিন পার হলেও কোথাও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমি মনে করি, এই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী, গণতন্ত্রমনা ও দেশের কল্যাণকামী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উচিৎ কালবিলম্ব না করে রাজপথে নেমে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তোলা।
যারাই গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ধ্বংস করে বিনা ভোটে চিরস্থায়ী ক্ষমতার বন্দোবস্ত করতে চায়, তাদের মূলোৎপাটন করা অত্যন্ত জরুরী। না হলে জাতির ভাগ্য বিপর্যয় ঘটতে পারে। অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। তাই সময় নষ্ট না করে দল,মত,বর্ণ তরুণ-ছাত্র নির্বিশেষে সমাজের সবাইকে দেশ রক্ষায় এখনই এগিয়ে আসাটা আবশ্য কর্তব্য বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
আরেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সোমবার বলেছেন,‘শুধুমাত্র নির্বাচন দেয়াই এই সরকারের কাজ নয়।’ তারও আগে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো বার বার নির্বাচন চাওয়ায় আহতদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।’ জনাব উপদেষ্টা, ‘যারা রাধে তারা চুলও বাঁধে’। আর নির্বাচন করা একমাত্র কাজ না হলেও, এটা যে আপনাদের প্রধান কাজ, এতে মনে কোনো সন্দেহ থাকা মোটেও কাম্য নয়।
সম্প্রতি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এক পোস্টে লিখেছেন, ‘কেউ যদি রক্তস্নাত এই অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে চায় চূড়ান্ত বিপ্লবের ডাক তাদের বিরুদ্ধেই আসবে।’
বিপ্লবী উপদেষ্টাদের বলতে চাই, ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়েছে। তার দলও মাঠে নেই। তাহলে আপনারা কার বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধ করবেন? চূড়ান্ত বিপ্লবের ডাকই বা কার বিরদ্ধে দেবেন?
তার চেয়ে ভাল হয়,সরকারী প্রটোকল ছেড়ে একটু সাধারণ মানুষের সাথে মিশে দেখুন। হাওয়া বদল করা আর কি। তাহলে ৩৫ জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা ও যমুনার কত জল গড়িয়েছে তা বুঝতে পারবেন। চূড়ান্ত বিপ্লব কিংবা গৃহযুদ্ধ যাদেরকে নিয়ে করবেন ভাবছেন। তারা কি আপনাদের ডাকে জুলাই অভ্যুত্থানের মতো সাড়া দেবেন? আমি মনে করি, অভ্যুত্থানের চেতনায় এরই মধ্যে ভাটার টান পড়েছে। প্রেক্ষাপট একদমই অন্যরকম। কারণ, হালুয়া-রুটির জন্য লালসাগ্রস্তদের দিয়েতো আর বিপ্লব হয় না।
আরেকটা বিষয় না বললেই নয়, আপনাদের কর্মকান্ডে সবচেয়ে বেশী আনন্দ পাচ্ছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসররা। কারণ, যে কাজের সফলতার জন্য তারা বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প হাতে নিয়ে বসে আছে। আপনারা বিনে পয়সায় তাদের সে কাজটি করে দিচ্ছেন নাতো?-লেখক: সাংবাদিক,ঢাকা।
ahabibhme@gmail.com