আজ মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
আজ মঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

সার সংকটে  পেঁয়াজ চাষিরা, ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা

 

ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলায় পেঁয়াজ আবাদের ভরা মৌসুমে রাসায়নিক সারের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় নির্ধারিত সময়ে ডিলারের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না সার। তবে বাইরের দোকানে মিললেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার কৃষকরা।

 

অপরদিকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এসব অনিয়মের খোঁজ খবর নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগীদের। এ অবস্থায় উৎপাদন ব্যহত হবার শঙ্কায় রয়েছেন শত শত কৃষক। তবে ডিলাররা বলছেন, তারা যে বরাদ্দ পাচ্ছেন, তাতে উপজেলার কৃষকদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।

উপজেলার ধাওড়া গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বুকভরা আশা নিয়ে ৫ বিঘা জমিতে রোপন করেছেন পেঁয়াজ। ভালো ফলনের আশায় নিয়মিত পরিচর্যার কাজও করছেন। কিন্তু সার সংকটের ফলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় চিন্তার ভাজ চোঁখে মুখে ফুটে উঠছে। সঠিক সময়ে পেঁয়াজ খেতে সার প্রয়োগ করতে না পারলে ফলন বিপর্যয়ে পুঁজি হারানোর চিন্তাও গ্রাস করছে তাকে।

 

এদিকে ডিলারদের মাধ্যমে চাহিদা মতো সার পাচ্ছেন না কৃষকরা। তবে অতিরিক্ত টাকায় খোলা বাজারে মিলছে সার, এমন অভিযোগ এই কৃষকের।

 

শুধু শরিফুল ইসলামই নয়, তার মতো শত শত কৃষকদের অভিযোগের তীর ডিলারদের দিকে। ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলাররা থাকেন না স্ব-স্ব স্থানে। দোকান খুলে বসেছেন পৌর এলাকায়। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে চড়া দাম দিলে খোলা বাজারে অল্প পরিমানণে পাওয়া যাচ্ছে এই সার। পেঁয়াজ আবাদের ভরা মৌসুমে সার সংকটে হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তবে দ্রুত সার সংকট নিরসনের দাবি তাদের।

রফিকুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামে ডিলারের কাছে সার আনতে গেলে সার দিচ্ছেন না ডিলাররা। বলছেন আমাদেও কাছে সার নেই। আবার খোলা বাজারে গেলে সার মিলছে, তবে দাম বস্তাপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি।

 

উপজেলার মদনডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘আমি চলতি মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপন করেছি। ভালো ফলনের আশায় নিয়মিতই পরিচর্যার কাজ করে যাচ্ছি। তবে সার সংকটের কারণে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় আছি। যদি সময় মতো পেঁয়াজ খেতে সার প্রয়োগ করতে না পারি তাহলে ফলন বিপর্যয়ে আমার সব পুঁজি হারাতে হবে। তবে ডিলারদের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী সার পাচ্ছি না। তাইতো অতিরিক্ত টাকায় খোলা বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে সার।

 

আবুল হোসেন নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘সার প্রয়োজন ৬ বস্তার, কাজ ফেলে রেখে ডিলারের কাছে গিয়ে সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকে পাওয়া যাচ্ছে এক বস্তা। একবস্তা সার নিয়ে কি করব?

ইসমাইল নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘সময়মতো জমিতে সার প্রয়োগ না করতে পারলে পেঁয়াজের ফলন ভাল হবে না। তাতে পুঁজি হারাতে হবে। এমন হলে পরের বছর থেকে আর পেঁয়াজ চাষ করব না।’এদিকে ডিলারদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ নেই, সেকারণেই এ সংকট দেখা দিয়েছে।

 

শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান জানান, কৃষকরা সার ঘরে মজুদ করে রাখায় এ সংকওট দেখা দিয়েছে। তা না হলে চাহিদা অনুযায়ী প্রতি কৃষক সার পেত। তবুও চেষ্টা করছি সব কৃষককেই পরিমাণমত সার দিতে। তবে ভালো ফলনের জন্য কৃষকদের নিয়মিত নানারকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে শৈলকুপা উপজেলায় পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার হেক্টর জমি। যেখানে, ইউরিয়া, টিএসপি, ডিওপিসহ রাসায়নিক সারের চাহিদা ধরা হয়েছিল ৮ হাজার মেট্টিক টন।

শেয়ার করুন
Share on Facebook
Facebook
Pin on Pinterest
Pinterest
Tweet about this on Twitter
Twitter
Share on LinkedIn
Linkedin