গত বছর ১৮ই মে শ্রীনগর থেকে পেহেলগাম পৌঁছাই দুপুর বারোটায় তারপর লাঞ্চ করে আড়াইটার দিকে আমাদের রিসোর্ট থেকে ঘোড়া নিয়ে বাইসারান ভ্যালির উদ্দেশ্যে রওনা হই। প্রায় ৫০ মিনিট ঘোড়ায় চড়ে উপত্যকার চূড়ায় পৌঁছাই। পাহাড়ে উঠার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা সারি সারি পাইন গাছ, পাহাড়ে বরফের আচ্ছাদন এ যেন এক স্বর্গ পৃথিবীতে। ঘোড়ায় চড়ার কষ্ট মুহূর্তেই ভুলে গেলাম। ঘন্টাখানেক সৌন্দর্য উপভোগ করার পর হঠাৎ বৃষ্টি। এক অপূর্ব পরিস্থিতি! সাথে সাথে রেইনকোট কিনলাম। বৃষ্টির মধ্যে ঘোড়ায় চড়ে অত্যন্ত পিচ্ছিল পথ ধরে আবার পেহেল গামে ফিরে আসলাম।
সেই বাইসারান উপত্যকাই ‘মৃত্যু উপত্যকা’য় পরিণত হল গত মঙ্গলবার! পাইন বন থেকে বেরিয়ে আসা জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হলেন ২৬ জন। কিন্তু ওই এলাকাকেই কেন হামলার জন্য বেছে নিল জঙ্গিরা? অনেকের মত, পর্যটনস্থলটি বাদ দিলে, বাইসারান উপত্যকার আশপাশের এলাকা ভীষণই দুর্গম। মূলত এই কারণেই ওই জায়গাটি বেছে নিয়েছিল জঙ্গিরা। জায়গাটি ঘন পাইন বনে ঘেরা হওয়ায় জঙ্গিরা অনায়াসেই সেখানে লুকিয়ে থাকতে পেরেছিল। সবুজ তৃণভূমিতে পর্যটকদের ভিড় বাড়তেই তারা বেরিয়ে এসে হামলা চালায়। হেঁটে বা ঘোড়ার পিঠে করে ছাড়া পেহেলগাঁও থেকে বৈসরন উপত্যকায় পৌঁছোনো মুশকিল। অনেকটা খাড়া পাহাড় ভাঙার পরে এক সময়ে ছবির মতো সবুজ উপত্যকাটা চোখের সামনে বেরিয়ে পড়ে। পাইন-ঘেরা সেই প্রান্তরে পর্যটকেরা হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ান। আবার শীতে বরফ পড়লে এই উপত্যকার চেহারা আলাদা। তখন স্কি করার মৌসুম। স্থানীয়দের মুখে-মুখে জায়গাটার ডাকনাম হয়ে গিয়েছে ‘মিনি সুইৎজ়ারল্যান্ড’। মঙ্গলবার সেই প্রান্তর-লাগোয়া খাবারের দোকানগুলোয় ভিড় করেছিলেন পর্যটকেরা। অনেকে ঘুরছিলেন মাঠে। ছবি তুলছিলেন। তখনই হামলা।
এখানে একটি কথা বলা দরকার। সাতদিনের কাশ্মীর ভ্রমণে অনেক কাশ্মীরীর সাথে কথা হয়। তারা ভারত, পাকিস্তান, চায়না কারো অধীনেই থাকতে চায় না তারা চায় স্বাধীনতা। ভারত অধ্যুষিত কাশ্মীরের প্রতি পঞ্চাশ গজে একজন করে ভারতীয় সেনা পাহারা দিচ্ছে। সকল পর্যটন অবস্থান গুলোতে ভারতীয় সেনা ও পুলিশরা সতর্ক অবস্থানে থাকে। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন বেশ কয়েকবার তাদের তল্লাশির মধ্যে পড়ি। কিন্তু গতকাল কেন বাইসারান ভ্যালির মত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না।প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ বাইসারানের একটি রিসোর্টের সামনে ঘোড়ায় চড়ছিলেন কয়েক জন পর্যটক। বাকিরা ইতিউতি ছড়িয়ে খাওয়াদাওয়া, গল্প করছিলেন। আচমকাই জংলা পোশাক পরা, মুখ ঢাকা কয়েক জন সশস্ত্র জঙ্গি পাইন বন থেকে বেরিয়ে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সামনে যে পর্যটককেই তারা দেখেছে, নাম-ধর্মপরিচয় জিজ্ঞেস করে কপালে গুলি করেছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘অন্তত জনা পাঁচেক জঙ্গি এসে, ধীরেসুস্থে খুনগুলো করে আবার পাহাড়ি ঢাল বেয়ে চলে যায়। দেখে মনে হয়েছে, যেন ওরা আগে থেকে জানত, কোথায় যেতে হবে, কী করতে হবে, কাকে কাকে মারতে হবে।’’
এটি কি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর কাশ্মীরে অগণিত ভারতীয়রা আগমন শুরু করে তাতে কাশ্মীরিরা নাখোশ। তাদেরকে আরো দমন পীড়ন করার জন্য কি এই ফন্দি বা জঙ্গি নাটক। দেখা যাক সময়ই বলে দেবে।