চাকরিবিথি ১৯১৮ এবং ১৯৭৯সালের বিশেষ বিধানের প্রস্তাবিত ধারা গুলো সংযোজন করা হলে যে সকল নতুন সংকটের উদ্ভব ঘটতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। এ ব্যাপারে শনিবার তারা সচিবালয়ের অভ্যন্তরে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা কর্মচারী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। এ সময় তারা নয়টি সংকটের কথা উল্লেখ করেন।
১. ১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধানের প্রস্তাবিত ধারাগুলো বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩৫(২) অনুচ্ছেদের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক, যা অধ্যাদেশ দ্বারা প্রবর্তন করা হয়েছিল এবং যা, সাধারণ নাগরিক ও কর্মচারীদের ন্যায্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক হওয়ায় সরকারের উচ্চ আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ বা বাতিল করা হয়েছিল।
২. নিবর্তনমূলক এ ধারা সংযোজন করা হলে। দেশে বিরাজমান অস্থিতিশীল নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সাথে সরকারের অনুগত কর্মচারীদেরকেও আনুগত্য থেকে দূরে ঠেলে দেওয়ার দেশ বিরোধী গভীর চক্রান্ত বাস্তবায়ন করার কাজটি কুচক্রিমহল সুক্ষভাবে কাজে লাগাবে এবং নতুন করে চরম বৈষম্যের উদ্ভব হবে ও সারা দেশের সমগ্র কর্মচারী অঙ্গনে সরকার বিরোধ নেতিবাচক মনোভাব ও অসন্তোষ বিস্তার লাভ করবে।
৩. প্রস্তাবিত ধারাগুলো চাকুরী আইনে সংযোজন করা হলে অনেক নিরীহ কর্মচারী কোন কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই চাকুরীচ্যুত হবে এবং দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাগণ সহজে দূর্নীতি করতে পারবে ও চাকুরীর ভয় দেখিয়ে হয়রানি ও কর্মচারী নিপীড়নের স্টীম রোলার চালাবে।
৪. প্রস্তাবিত ধারাগুলো চাকুরী আইনে সংযোজন করা হলে অসৎ কর্মকর্তাগণ কর্তৃক প্রজাতন্ত্রে নারী সহকর্মীবৃন্দ তাদের কর্মক্ষেত্রে সম্ভ্রমহানীসহ নানাবিধ হয়রানীর সম্মুখীন হবেন এবং তৎসাথে মিথ্যা অপবাদের শিকার হয়ে চাকুরী হারানোর মতো উভয় প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। কারণ নিবর্তনমূলক আইন কার্যকর হলে এর দ্বারা কর্মকর্তাদের একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
৫. নিজেদের আত্মমর্যাদা হানিকর কালা কানুন প্রবর্তিত হলে কর্মচারীরা আত্মঅভিমানে আর সরকারকে পূর্বের ন্যায় সহযোগীতার মনোভাব পোষণ করবে না, উপরুন্ত একতরফা বৈষম্যে শীকার হয়ে সরকারকে স্বাভাবিক কার্যক্রমে সহযোগীতার পরিবর্তে যুক্তিসংগত কারণে অসহযোগীতাকে তরান্বিত করবে। ফলে প্রতিবন্ধকতামুক্ত কর্মপরিবেশে দূর্নীতিবাজ মন্ত্রী ও আমলাদের পোয়া বারো অবস্থার সৃষ্টি হবে।
৬. ১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধান পরবর্তীতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা দ্বারা রহিত করা হয়েছিল।
৭. উক্ত বিধান পুনরায় চালু করা হলে সরকারের দূর্বলতা চরমভাবে প্রকাশিত হবে এবং সরকারী বিরোধী ঘাপটি মেরে থাকা কর্মকর্তাগণ চলমান কোনঠাসা অবস্থান থেকে ঘুরে দাড়িয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যেই শক্ত অবস্থান তৈরী করে ফেলতে পারে। কারণ সরকারের অনুগত কর্মচারীগণ তখন পূর্বের ন্যায় সরকার বিরোধী অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সরকারকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেনা। নিবর্তনমূল আইনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে প্রথমত তারা সরকার প্রবর্তিত কালা কানুনের প্রতি ঘৃণা ও আত্ম অভিমান প্রকাশ করবে এবং দ্বিতীয়ত চাকুরী হারানো ভয় স্বাভাবিক কার্যক্রমে পূর্বের ন্যায় ভূমিকা পালন করবেনা।
৮. চলমান পরিস্থিতিতে কর্মচারীরা যারপরনাই বঞ্চিত, ১০ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও কোন পে-কমিশন গঠন করা হয়নি, দক্ষ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মচারীদের পূর্ণ কর্মক্ষমতা ও দৈহিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এবং দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও চাকুরীর বয়স বৃদ্ধি না করা, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি সামাল দিয়ে নিজেদের স্বাভাবিক জীবন-মান বজায় রাখতে না পারা, সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করতে না পারাসহ নানাবিধ প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মূখীন হয়ে অধস্থন কর্মচারীদের জীবন বিপর্যস্থ যেখানে বিষয়টি হয়ে দাড়িয়েছে “ ভাত দেয়ার মুরোদ নেই, কিল মারার গোসাই”-এর মতো অবস্থা সেখানে আবার নতুন করে কালা-কানুন প্রবর্তন। যা স্পষ্টত বাক স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার হরনের নামান্তর। শুধু এক পক্ষের প্রস্তাব বিবেচনা এবং ভুক্তভোগী অধস্তন কর্মচারী নেতৃবৃন্দের বক্তব্য গ্রহণ না করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হবে স্বাভাবিক কর্মপরিবেশের জন্য চরম আত্মঘাতী।
৯. সর্বপরি প্রস্তাবিত কর্মচারী নিবর্তনমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীগণ রাষ্ট্রের পরিবর্তে কর্মকর্তাগণের সেবাদাসে পরিণত হবে এবং পতিত স্বৈরাচারের দোসররা পুনরায় বীরদর্পে গোপন ষড়যন্ত্র করতে উদ্বুদ্ধ হবে। সরকারের নীতি নির্ধারকদের অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে এরূপ কার্যক্রম সরকারের বিরূদ্ধে সারাদেশের কর্মচারীদের উস্কে দেয়ার এক গভীর ষড়যন্ত্র যা ঠান্ডা মাথায় সুক্ষভাবে গৃহীত হচ্ছে। উপরুন্ত সরকারের সহযোগীদেরকে শত্রুর কাতারে ঠেলে দেয়ার অপপ্রয়াস। প্রজাতন্ত্রের সাধারণ কর্মচারীগণের পক্ষ থেকে আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই যে, আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা এসব ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উম্মোচন করতে সদা প্রস্তুত থাকবো ইনশা-আল্লাহ।
বিক্ষোভ মিছিল ও সভায় নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি মোঃ বদিউল কবীর এবং মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদ।