জীবনে চলার পথে যত করি ভুল। ভুলটাকে ভুল করে ভাবি রাঙ্গাফুল। আলোর পরশ খুঁজি মিছে আলেয়ায়….। সম্মানিত পাঠক, ইউনুস সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে মোহাম্মদ আজিজের এই গানটি যেন অমোঘ সত্য হয়ে ফুটে ওঠেছে।পতিত স্বৈরাচার হাসিনার সরকারামলের রাষ্ট্রীয় গুম-খুন,পুলিশী হয়রানি, অবাধ-লুটপাট আর জঙ্গি নাটকের অংশটুকু বাদ দিলে মনে হবে। হাসিনার ভূতই যেন ইউনুস সরকারের মাথায় চেপে বসেছে। সমস্ত রীতি-নীতি আর মানুষের স্বপ্ন-আশাকে দূরে সরিয়ে রেখে এ সরকার যা খুশি তাই করে চলেছে। সর্বত্র বৈষম্যের ঝড়ো হাওয়া বইছে। মহামারি রুপ নিয়েছে অফিস-আদালতের হয়রানি। চরম নৈরাজ্য চলছে খোদ ঢাকা জেলা প্রশাসনে। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন না করে সরকার পুরো দেশকে পরিণত করেছে এক ভয়ের রাজ্যে। সার্বিক পরিস্থিতিতে এ কথা বললেও অত্যুক্তি হবে না যে, এ যেন এক বৈষম্যপ্রেমী নব্য স্বৈরাচার।
চাকরিচ্যুতি,ওএসডি এবং বাধ্যতামূলক অবসর দেয়ার নতুন রেকর্ড গড়েছে সরকার। এর পেছনে চলছে অগুনতি টাকার খেলা। ওএসডি কর্মকর্তাদের ফেরাতে মোটা অংকের টাকার অফার করেন ছাত্র সমন্বয়ক চক্র! বনিবনা হলে বসানো হয় তাদের পছন্দের চেয়ারে।
ফ্যাসিবাদের দোসর-দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি হলে সবার মতো আমিও স্বাগত জানাতাম। কিন্তু সরকার হাটছে ঠিক তার উল্টো পথে।
একদিকে দক্ষ,পেশাদার-মেধাবী ও সৎ কর্মকর্তাদের কোনঠাসা করা হচ্ছে। অন্যদিকে টাকার বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের দোসর-দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে।
দশম সংসদ নির্বাচনে জড়িত থাকায় পুলিশের ১০৩ জন সদস্যের বিপিএম-পিপিএম পদক প্রত্যাহার করলেও নবম এবং একাদশ নির্বাচনে জড়িতদের পদক কেন প্রত্যাহার করছেন না? দেশের মানুষ জানতে চায়।
সম্মানিত পাঠক, চলুন এবার দেখে নেয়া যাক, বৈষম্যপ্রেমী নব্য স্বৈরাচারের কিছু কর্মকান্ড।
গোলাম রসুল অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারামলে পদোন্নতি পেয়েছেন এবং পুলিশ স্টাফ কলেজে কর্মরত ছিলেন। তবে ডিআইজি হতে পারেননি। বিগত সরকারের সময় তিনি ডিআইজি হওয়ার জন্য প্রানান্ত প্রচেষ্টা চালান। এর অংশ হিসাবে তিনি পুলিশ স্টাফ কলেজে “বঙ্গবন্ধু চেয়ার” স্থাপনের লক্ষ্যে পুলিশ স্টাফ কলেজ প্রধান ও পুলিশ সদরদপ্তরকে পাশ কাটিয়ে একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বর্তমানে তিনি এসবি প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
আব্দুল আলীম স্বৈরাচার সরকারের ঘনিষ্ঠদের একজন। ডিআইজি রংপুর রেঞ্জ,কমিশনার রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের গ্রেফতার নির্যাতনের সাথে জড়িত ছিলেন। সরকারি ভ্রমনভাতা বিলে ব্যপক গড়মিলের অভিযোগে তাকে রংপুর থেকে ঢাকায় নৌ পুলিশে বদলী করা হয়। পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে নৌ পুলিশের প্রধান ছিলেন। বর্তমানে পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে কর্মরত আছেন।
মোঃ সরওয়ার। অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন-অর্থ) হিসেবে পতিত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারামলে এসবির প্রধান কুখ্যাত মনিরুল ইসলামের ডান হাত হিসেবে সমস্ত টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন। পুরোটা সময় ছিলেন মনিরুলের ছায়া সঙ্গী। এসবি অফিসের প্রবেশ মুখে ‘মুজিব কর্ণার’র নির্মাতা ১৫ ব্যাচের এই কর্মকর্তা মুজিব জন্মশতবার্ষিকীরও তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। স্মরণ করতে পারেন, আন্দোলনকারীদের দমনে কৃতিত্বের জন্য খুনী হাসিনার দেয়া নগদ প্রণোদনার ২৫ কোুটি টাকা মনিরুলের ভল্টে রাখা ছিল। ৫ আগস্টের পর মনিরুল পলাতক হলে পুরো এসবি অফিসের নিয়ন্ত্রণ নেন সরওয়ার। মনিরুলের রুমে তালা মারেন নিজ হাতে। টাকা লোপটের রিপোর্ট পত্রিকায় প্রকাশ হলে পুলিশ সদর দপ্তর তদন্ত কমিটি গঠন করে। সিআইডির ফরেন্সিক পরীক্ষায় ৫ থেকে ১১ আগস্ট মনিরুলের রুমের সামনে ও আশপাশ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব এবং মনিরুলের কক্ষের ডিজিটাল সিকিউরিটি সিষ্টেমে হস্তক্ষেপের প্রমান পায় তদন্ত কমিটি। অর্থাৎ মনিরুলের রুমের ডিজিটাল লক ভেঙ্গে একাধিক ব্যক্তির অসংখ্যবার তার কক্ষে প্রবেশের প্রমাণ পায়। আমার সূত্র বলছে, সরওয়ারের ফিঙ্গার প্রিন্ট সর্বোচ্চ বার ব্যবহৃত হয়েছে বলে ফরেনসিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার তাকে শাস্তির বদলে পুরস্কৃত করেছে। বর্তমানে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) পদে কর্মরত আছেন তিনি।
এ এন এম সাজেদুর রহমান এসবির এস এস (টেকনিক্যাল) পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি সিসিটিভি সহ সব ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে ছিলেন। ৫ আগস্ট সরকার পতন হলে সাজেদুর সরওয়ারকে সার্বিক সহযোগিতা করেন। বিনিময়ে তিনি টাকার ভাগ পান। বর্তমানে হবিগঞ্জের এসপি হিসেবে কর্মরত আছেন।
এস এন মোঃ নজরুল ইসলাম,এস এস (অর্থ) হিসেবে এসবি প্রধান মনিরুল ইসলামের সব ধরনের আর্থিক দুর্নীতির মূল কারিগর ছিলেন। বর্তমানে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) হিসেবে কর্মরত আছেন।
মোঃ রেজাউল করিম বিগত সরকারের সময় অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে তৎকালীন আইজিপি এ.কে.এম শহীদুল হকের সহযোগী হিসেবে ছিলেন ।পরবর্তীতে তার কিছু দুর্নীতি উদঘাটিত হলে বিভাগীয় তদন্তে তিনি আর প্রমোশন পাননি। বর্তমানে ডিআইজি অপারেশন হিসেবে পুলিশ সদর দপ্তরের হর্তাকর্তা সেজে বসেছেন। তার পিতা ছিলেন গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ।
মোঃ কামরুল আহসান। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারামলে অতিরিক্ত ডিআইজি পর্যন্ত পদোন্নতি পান। তৎকালীন আইজিপি এ.কে.এম শহীদুল হকের সাথে কেনা-কাটার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সে সময় দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে সিঙ্গাপুরে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয় করে চিকিৎসা নেন। পরবর্তীতে কেনাকাটায় বড় ধরনের দুর্নীতি ধরা পড়লে তৎকালীন আইজিপি এ.কে.এম শহীদুল হক তাকে চাকুরীচুত করার উদ্যগ নেন। সে সময় তার প্রভাবশালী ব্যাচমেট ডিএমপির সাবেক কমিশনার গোপালগঞ্জের হাবিব তাকে উদ্ধার করেন। দুর্নীতির অভিযোগে তিনি আর পদোন্নতি পাননি।বর্তমানে ডিআইজি (গোপনীয়) হিসেবে কর্মরত মোঃ কামরুল আহসান পুলিশ সদরদপ্তরের প্রভাবশালীদের একজন।
অতিরিক্ত ডিআইজি হিসাবে মোঃ আতাউল কিবরিয়া গোপালগঞ্জের হাবিবের বিশ্বস্ত সহযোগী ছিলেন। হাবিবের টার্গেটের বহু নিরীহ এবং লঘু দোষী কর্মকর্তাদের বিভাগীয় তদন্তের বাহানায় চাকরিচ্যুত করেছেন। আবার অর্থের বিনিময়ে হাবিব তাদের রক্ষা করেছেন। হাবিবের টার্গেট কর্মকর্তাদের বিভাগীয় তদন্ত সর্বদাই কিবরিয়ার কাছে পাঠানো হতো। আওয়ামী সরকারের প্রায় অর্ধেক সময় পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ কেনাকাটায় জড়িত ছিলেন। ছাত্রজীবনে শিবির সংশ্লিষ্টতা ও দুর্নীতির অভিযোগে পদোন্নতি পাননি। বর্তমানে ডিআইজি হিসেবে পুলিশ সদরদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ কেনাকাটায় জড়িত।
মো রেজাউল হায়দার স্বৈরাচার সরকারের ডিআইজি হিসেবে পুলিশ হাসপাতালের প্রধান ছিলেন। তিনি বিগত সরকারের গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের ক্লাসমেট হিসেবে প্রভাব খাটাতেন। কুখ্যাত মনিরুলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন । সে সময় ৪ অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম, হাসানুল হায়দার, আতিকুল ইসলাম এবং তারিক হাসানের নেতৃত্বে পুলিশ সদরদপ্তরে শক্তিশালী দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছিল। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের ঘনিষ্ট হিসেবে পুলিশ হাসপাতালের প্রধানের পদ লাভ করেন। পুলিশ হাসপাতালের কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির ভাগ আসাদুজ্জামান কামালকেও দিতেন। বর্তমানে ডিআইজি রেলওয়ে হিসেবে বহাল তবিয়তে কর্মরত আছেন ।
মহাঃ আশরাফুজ্জামান ডিআইজি হিসেবে বেনজিরের খুব কাছের একজন ছিলেন। একবার পদোন্নতিতে সুপারসিডেড হলেও পরে বেনজিরের হস্তক্ষপে পদোন্নতি পান। আওয়ামী সরকারের সময় বিভিন্ন জেলায় এসপি এবং সিএমপি ও ডিএমপিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। বিপুল ধনসম্পদের মালিক। তার ৩য় স্ত্রী জার্মান। সর্বশেষ আন্দোলনকালে তিনি ডিএমপিতে কুখ্যাত ডিবি হারুনের স্থলাভিষিক্ত হন। বর্তমানে শিল্প পুলিশের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত।
১৭ ব্যাচের ইমতিয়াজ আহমেদ কুমিল্লা সহ বিভিন্ন জেলার এসপি ছিলেন। কাজ করেছেন ডিএমপি-সিএমপি সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে। ডিআইজি হিসেবে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ছিলেন অনেক বছর। আন্দোলনের সময় র্যাবের দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন। হেলিকপ্টারসহ ফোর্স বন্টনের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। দুর্নীতির মাধ্যমে উত্তরায় প্রাসাদোপম বাড়ী বানিয়েছেন। এখন শিল্প পুলিশের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত আছেন।
অতিরিক্ত আইজিপি আবু হাসান মোঃ তারিক পুলিশের ৪ খলিফা খ্যাতদের একজন (মনিরুল ইসলাম, হাসানুল হায়দার ও আতিকুল ইসলাম)। দুর্নীতি সিন্ডিকেটের হোতা হিসেবে দীর্ঘ সময় পুলিশ সদরদপ্তরের অর্থ ও বাজেট শাখায় নিয়োজিত ছিলেন। গাজীপুরে রিসোর্টসহ অনেক সম্পদের মালিক। বর্তমানে পুলিশ স্টাফ কলেজের রেকটর হিসেবে কর্মরত।
১৮ ব্যাচের মোঃ হায়দার আলী দীর্ঘসময় পুলিশের অপারেশন শাখায় ডিআইজি হিসাবে কর্মরত ছিলেন। একাধিক জেলার এসপিসহ ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত ছিলেন । এতো বেশী বিদেশ সফর করেছেন যে পুলিশের সমস্ত বিদেশ সফর তিনি একাই করতেন বলে কথিত আছে। দুর্নীতিগ্রস্ত একজন কর্মকর্তা। বর্তমানে ডিআইজি হিসেবে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত।
অপরদিকে দক্ষ,পেশাদার-মেধাবী ও সৎ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি কাজী জিয়া উদ্দিন এবং পুলিশ স্টাফ কলেজের অতিরিক্ত ডিআইজি সোহেল রানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। প্রায়ই তাদের নামে ভিত্তিহীন বদনাম রটাচ্ছে দুর্নীতিবাজ চক্র।
এদিকে সৎ অফিসার হিসেবে খ্যাত ডিআইজি নিশারুল আরিফ,কুদ্দুস আমীনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে। ওএসডি করা হয়েছে ডিআইজি মোঃ মনিবুর রহমান, আবুল ফয়েজ,মাহবুবুর রহমান, মোঃ মাহফুজুর রহমান এবং এ জেড এম নাফিউল ইসলামকে।
এদের মধ্যে ডিআইজি কাজী জিয়া উদ্দিন এবং এ জেড এম নাফিউল ইসলাম দক্ষ,পেশাদার-মেধাবী ও সৎ কর্মকর্তার পাশাপাশি ন্যায়বান এবং ধর্মপরায়ন মানুষ হিসেবেও সর্বজনবিদিত। সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে সদাচারণের জন্যও তাদের সুখ্যাতি আছে। যে কোনো মানদন্ডে এরা দু’জনই পুলিশের জন্য অনুকরনীয় ক্যারিয়ারের অধিকারী। অথচ তারাই এখন বঞ্চিত। প্রিয় পাঠক কী বুঝলেন?
জনপ্রশাসনেও একই চিত্র।
এসব বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা-বিশেষ সহকারী এবং আইজিপির বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করে এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তাদের কারো সাড়া মেলেনি।
আসল অপরাধী আর বাজার সিন্ডিকেটের টিকিটি ছুঁতে না পারলেও সরকারি লোকদের ওপর বাহাদুরি দেখাচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে মূর্খ-ব্যর্র্থ সরকার।
প্রশ্ন হচ্ছে,নির্দেশ পালনের জন্য যদি ডিসি-এসপি কিংবা অন্য কোনো সরকারি কর্মকর্তা দায়ী হয়, তবে নির্দেশদাতাদের কেন নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ দেয়া হল? আমি জানতে চাই।
তাহলে নির্দেশদাতা মূল অপরাধীদের দেশত্যাগে সহযোগিতার জন্য আপনাদেরও কি বিচার হওয়া উচিৎ নয় সরকার বাবু?
আপনাদের সাহায্যে আসল অপরাধীরা বিদেশে পালিয়ে গিয়ে রাজা-বাদশার মতো জীবন-যাপন করছে। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।আর আপনারা এখন গরীব মানুষের করের টাকায় চুনোপুঁটিদের বিচারের নামে নাটক মঞ্চস্থ করছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে,একজন ডিসি-এসপির কিংবা অন্য কোনো সরকারি কর্মকর্তার কয়টা মাথা আছে যে তিনি সরকার তথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ উপেক্ষা করবেন? আর কেউ যদি তা করে। তবে কি তার চাকরি থাকবে?
বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারের নির্দেশ কেউ না মানলে তিনি কেবল চাকরিচ্যুত হন। এমন নয়। বরং তার ওপর নেমে আসে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন।
এমন বাস্তবতা শুধু রাজনৈতিক সরকারের ক্ষেত্রেই সীমিত নয়। এ ক্ষেত্রে এই সরকার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে,অরাজনৈতিক হয়েও সকল ক্ষেত্রে এ সরকার রাজনৈতিক সরকারের চেয়েও অনেকগুণ বেশী নোংরা খেলায় মেতে ওঠেছে।
রাজনীতির এক সন্ধিক্ষণে গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রতিশ্রæতি দিয়ে ক্ষমতারোহণের পর কার্যত রাজনীতির চোরাগলিতে পা ঢুকিয়েছে ক্ষমতালোভী ব্যর্থ সরকার। যা কেবল একটা জঘন্য স্বৈরাচারের পক্ষেই সম্ভব।
পাঠক বন্ধুরা,সরকার কি সত্যিই হাসিনা তথা আ.লীগকে মুছে দিতে চায়? নাকি পুনর্বাসন করতে চায়?
প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর সমাজের সর্বত্র ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের মন থেকে হাসিনা তথা আ.লীগকে মুছে ফেলার যে অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। আমি মনে করি,সরকার তা সচেতনভাবেই নষ্ট করেছে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতার লোভে।
বই মেলায় হাসিনা বীন কিংবা শহরজুড়ে গ্রাফিতি এঁকে ঘৃণা ছড়িয়ে সহজ-সরল মানুষের মন জয় করা সম্ভব। কিন্তু এভাবে যে কাউকে মন থেকে মুছা যায়না। এই সত্য উপলব্ধির সক্ষমতাও নেই এই মূর্খ সরকারের।
সরকারকে আবারো বলছি, এর আগেও বহুবার বলেছি। আপনাদের খেলা মানুষ বুঝে গেছে। তাই দেরী না করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে সম্মান নিয়ে ঘরে ফিরে যান। না হলে আপনাদেরও হাসিনার পরিণতি হতে পারে! হাসিনা পালানোর সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু চরমভাবে বঞ্চিত-ক্ষুব্ধ জনগণ আপনাদের হয়ত সে সুযোগও দেবেন কি-না। এ নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান।-লেখক: সাংবাদিক,ঢাকা।
ahabibhme@gmail.com