আজ বুধবার, ২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
আজ বুধবার, ২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বাংলাদেশ-ভারত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার লড়াই

বিশ্ব পরিস্থিতি দ্রুত পালটাচ্ছে। ক্রমেই জটিল হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন রাশিয়ার মতো শক্তিশালী দেশগুলোর সম্পর্ক। তাদের মধ্যে ভূরাজনীতি, কৌশলগত প্রভাববলয় সৃষ্টির প্রতিযোগিতা তীব্র হচ্ছে। নতুন এই স্নায়ুযুদ্ধের প্রভাব পড়ছে সর্বত্র। এসব শক্তির মধ্যে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। তাদের লড়াইয়ে এক ধরনের চাপে পড়েছে বাংলাদেশ ভারত

যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসন এশিয়ায় মিত্র দেশগুলোকে নিয়েইন্দোপ্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) গঠন করেছে। এই কৌশলের আওতায় সামরিক সহযোগিতা জোরদারে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ভারত এই চার দেশ সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে কোয়াড। আইপিএসের আওতায় অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে যাত্রা শুরু করেছেইন্দোপ্যাসিফিক ইকোনমিক ফোরাম’ (আইপিইএফ) যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এসব জোটের লক্ষ্য হলো, চীনের বিরুদ্ধে একটি বলয় গঠন করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে এসব জোটে বাংলাদেশ ভারতকে পেতে চায়

বাংলাদেশ কোনো দেশের বিরুদ্ধে জোটে অংশ নেয়নি। কোনো সামরিক জোটেও যোগ দেয়নি। তবে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাইডেনের আইপিইএসের কোনো কোনো উপাদানে যোগ দেওয়া যায় কিনা খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ

ভারত সমুদ্রসীমার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোয়াড জোটে যোগ দিলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থের বাইরে যাচ্ছে না। বিশেষ করে কোয়াডের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে ভারত যুক্তরাষ্ট্র যৌথ নজরদারি করছে। তবে তাইওয়ান, মিয়ানমার প্রভৃতি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের মধ্যে ভিন্নমত আছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক জোট আইপিইএফে যোগ দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশকেও আইপিইএফে যোগদানে উৎসাহ দিচ্ছে প্রতিবেশী দেশটি

রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘে বিভিন্ন প্রস্তাবেও বাংলাদেশকে নিজেদের পক্ষে চায় যুক্তরাষ্ট্র। পর্যন্ত সাধারণ পরিষদের বিভিন্ন প্রস্তাবে বাংলাদেশ কখনো রাশিয়ার পক্ষে আবার কখনো রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। ঢাকার যুক্তি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়এটা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি। বাংলাদেশের নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জাতিসংঘে ভোটদান কিংবা ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা। ভারতও একই ধরনের অবস্থান নিয়েছে। রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মানছে না ভারত। কেউ কেউ মনে করেন, বিবিসির মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ডকুমেন্টারি প্রচার মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের চাপ সৃষ্টির অংশ। ভারতও পালটা ব্যবস্থা নিয়েছে। ভারতে বিবিসি দপ্তরে তল্লাশি চালানো হয়েছে

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের সুর কিছুটা নরম। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলে বাংলাদেশ সফরকালে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন। ধরনের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি মার্কিন কর্মকর্তারা এও বলছেন যে, তারা কোনো দলের পক্ষে নন। তারা নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলে থাকেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠককালে রাজনীতি, নির্বাচন, মানবাধিকার প্রভৃতি বিষয়ে বৈঠকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পক্ষে সোচ্চার হলেও প্রকাশ্যে মন্তব্যে শোলে সতর্ক ছিলেন। এবারের সফরে ডেরেক শোলে প্রকাশ্য কিংবা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কোথাও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেননি। তিনি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলেছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি নেতারা বিভিন্ন মহলে মন্তব্য করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহ দিয়ে পরে তাদের পক্ষে থাকেনি। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কানে যাওয়ার পর এবার তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা মুখে আনছে না। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্র কোনো দলের পক্ষে নয়। একইদিনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ভিনয় ক্বাত্রা ঢাকা সফরকালে মন্তব্য করেন যে, ভারত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকবে। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জি২০ সম্মেলনে অতিথি রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত

বাংলাদেশকে শক্তিশালী মিত্র হিসাবে পেতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে শুধু বুঝিয়ে রাজি করানোই নয়; কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাপও দিচ্ছে ওয়াশিংটন। ্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর পোশাক শিল্পের কপিরাইট নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় ২৮ শতাংশ অর্থায়ন যুক্তরাষ্ট্রের। মানবাধিকার, গণতন্ত্রসহ অন্যান্য বিষয় সামনে এনেছে। বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনে এবারও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। ডেরেক শোলে জানিয়েছেন, গণতন্ত্রের বিকাশে বাংলাদেশের পদক্ষেপের কোনো কর্মপরিকল্পনা ঢাকা দেয়নি। তাই এবারও গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রিতদের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই

যুক্তরাষ্ট্রের বার্মা অ্যাক্টও বাংলাদেশকে চিন্তায় ফেলেছে। এই আইনের মাধ্যমে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন জান্তাকে হটিয়ে ন্যাশনাল ইউনিটির সরকারকে ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের। এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কিংবা ভারতের যোগ দেওয়া কঠিন। ওয়াশিংটন বলছে, মিয়ানমারে জাতীয় ঐক্যের সরকার ক্ষমতায় গেলে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে। গণতন্ত্র দেবে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান। বাস্তবে অতীতে সু চির সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়েও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হয়নি

চীন তাদেরবেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (বিআরআই)- বাংলাদেশকে চাইছে। বাংলাদেশ মেরিটাইম সহযোগিতায় চুক্তির মাধ্যমে বিআরআইয়ে যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জাম, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে নিবিড় সহযোগিতা রয়েছে। বাইডেনের আইপিএসে বাংলাদেশ যোগ দিচ্ছে কিনা সেটা বারবারই জানতে চাইছে চীন। বিশেষ করে কোয়াডে যোগদানের বিরুদ্ধে আগেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত লি জিমিং তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোয়াডে যোগ দিলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অপরদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকারি মহলে নরম সুর লক্ষণীয়। স্বাভাবিকভাবে এটা রাশিয়ার নজর এড়ায়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেও সুসম্পর্ক সত্ত্বেও এবার রাশিয়া মস্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রুশ জাহাজ ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে। রূপপুরে রাশিয়ার সহযোগিতায় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে জাহাজটি বাংলাদেশে আসছিল। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকা সব রুশ জাহাজকে বাংলাদেশে ভিড়তে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা

শেয়ার করুন
Share on Facebook
Facebook
Pin on Pinterest
Pinterest
Tweet about this on Twitter
Twitter
Share on LinkedIn
Linkedin