আজ বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৮শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
আজ বুধবার, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৮শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

শরীয়তপুরে তুচ্ছ ঘটনায় ক্লাস চলাকালীন শিক্ষিকার উপর হামলা

হামলাকারী মুন্নী আক্তার

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রেনিকক্ষে হামলা করে উম্মে কুলসুম (৫৫) নামে এক শিক্ষিকাকে আহত করার অভিযোগ উঠেছে মুন্নি আক্তার (৩০) নামে এক নারীর বিরুদ্ধে। গত রোববার (১৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার ১০৩ নং উত্তর ভূমখাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

হামলার শিকার উম্মে কুলসুম ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা এবং একই গ্রামের মৃত আলী আহাম্মদ হাওলাদার এর স্ত্রী।

এঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষিকার মেয়ে হুমায়রা সাফা বাদী হয়ে নড়িয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। একই সঙ্গে হামলার ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পৃথক অভিযোগ দায়ের করছেন।

এদিকে হামলার বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া সহ ভুক্তভোগী শিক্ষিকাকে হুমকি ধামকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি, বিঝারী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহমেদ কাজী এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন।

জানাযায়, অভিযুক্ত মুন্নী আক্তার স্কুলের পাশে আওয়ামীলীগ নেতা আলী কাজীর একটি বিলাসবহুল বাড়িতে বসবাস করেন।  আলী কাজীর প্রভাব দেখিয়ে এলাকার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যাবহারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তিনি ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকার মেয়েকে জড়িয়ে এলাকায় আপত্তিকর কথাবার্তা ছড়াচ্ছিলেন। মুন্নী আক্তারকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করলে গত শনিবার ওই শিক্ষিকার সঙ্গে মুন্নী আক্তারের বাকবিতন্ডা হয়। পরদিন বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেনীর কক্ষে শিক্ষিকা উম্মে কুলসুমকে বেধরক মারধর করে মুন্নী আক্তার। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। হামলার পরে স্থানীয়রা অভিযুক্ত মুন্নীকে আটক করতে চাইলে প্রধান শিক্ষক এর সহযোগীতায় ঘটনাস্থল থেকে সে পালিয়ে যায়।

এব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা উম্মে কুলসুম বলেন, ‘আমার মেয়েকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় আমি মুন্নীকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলি। কিন্তু সে আমার উপর ক্ষীপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষকের সহযোগীতায় স্কুলে প্রবেশ করে শ্রেনিকক্ষেই আমাকে মারধর করে। সে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত করে মেঝেতে ফেলে শ্বাসরোধে হত্যা চেষ্টা করে।  সেদিন আমার ক্লাস ছিল প্রথম শ্রেনিতে কিন্তু প্রধান শিক্ষক আমাকে জোর করে শিশু শ্রেনীতে পাঠান। আমাকে মারধর থেকে বাচাতে তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। উল্টো তিনি বলেন, একজন মহিলা আপনাকে মেরেছে এখানে আমার কি করার আছে। প্রধান শিক্ষক মারধর থেকে আমাকে না বাচিয়ে উল্টো হামলাকারীর পক্ষ নিয়েছেন। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

অভিযুক্ত মুন্নী আক্তার বলেন ‘উম্মে কুলসুম একটা খারাপ মানুষ। আমার সাথে খারাপ আচরন করেছে তাই মেরেছি।’ বিদ্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করে কেন হামলা করলেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন ‘তাকে স্কুল ছাড়া কোথাও পাইনা, তাই ওখানেই মেরেছি।’

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সেদিন মুন্নী আক্তার স্কুলে এসে শিক্ষিকা উম্মে কুলসুম এর কথা জিজ্ঞাসা করলে আমি শিশু শ্রেনির কক্ষ দেখিয়ে দেই। সেখানে গিয়ে কুলসুমকে বেধড়ক মারধর করে। পরে আমি মুন্নীকে স্কুল থেকে বের করে দেই। দুজন মহিলা মারামারি করছে এখানে আমার কি করার আছে।’
তিনি আরও বলেন ‘আমার স্কুলের শিক্ষিকা কুলসুম অনেক খারাপ। তার অত্যাচারে আমি অতিষ্ট। আমি তার অনেক কিছু সহ্য করেছি।’

এ বিষয়ে আওয়ামীলীগ নেতা আলী আহাম্মেদ কাজী বলেন, ‘কুলসুম নামের ওই শিক্ষিকা আসলেই খারাপ। আপনারা খবর নিয়ে দেখেন। সে তার নিজের কারনেই মার খেয়েছে।’

এ বিষয়ে তাৎক্ষনিক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত কিংবা হামলাকারীকে আটকের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিলেন না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মোবাইলে ব্যালেন্স ছিলোনা।’

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নড়িয়া-জাজিরা সার্কেল আহসান হাবিব বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।’

শেয়ার করুন
Share on Facebook
Facebook
Pin on Pinterest
Pinterest
Tweet about this on Twitter
Twitter
Share on LinkedIn
Linkedin