
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত ভাসানচর দ্বীপ ৩০ বছরের পুরনো। ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানেও দ্বীপটির কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে বর্ষা, বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কায় রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, দাতা গোষ্ঠী ও কূটনীতিকদের মাঝে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। তাদের নেতিবাচক মনোভাব বদলাতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের ভাসানচর স্থানান্তর নিয়ে বিদেশিদের অনীহা রয়েছে। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না পাঠানোর পক্ষে রয়েছে। তারপরও স্ব-ইচ্ছায় কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে সরকার।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিদেশি দাতাগোষ্ঠীর ধারণা, বর্ষা, বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় ভাসানচর এলাকা ডুবে যেতে পারে। তাই দ্বীপটিকে বসবাসের অনুপযোগী বলে তারা ধারণা করছেন। এরমধ্যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে এমনটি দাবি করা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভাসানচর দ্বীপটি ৩০ বছরের পুরনো। সেখানে আগে থেকেই মানুষের বসবাস রয়েছে। ২০২০ সালের মে মাসের ১৬ থেকে ২১ তারিখ বাংলাদেশের বুকে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাত হানে। ওই ঘূর্ণিঝড়ের সময় ভাসানচর দ্বীপটির কোনো ক্ষতি হয়নি। দ্বীপটি পুরোপুরি নিরাপদ। স্থানান্তরিত রোহিঙ্গারাও নিরাপদে থাকবেন।
জাতিসংঘ দাবি করছে, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়ার সবকিছু তাদের অবহিত করা হয়নি। কিন্তু অভিযোগ পুরোপুরি নাকচ করে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের দাবি, এ বিষয়ে শুরু থেকেই জাতিসংঘকে অবহিত করা হয়েছে।
জাতিসংঘ জানায়, ভাসানচর নিয়ে কারিগরি কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ নিয়ে মতামত জানানো হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও জাতিসংঘের মতোই বিবৃতি দিয়েছে।
রোহিঙ্গা স্থানান্তরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করলেও জাতিসংঘের কারিগরি কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনকে আমলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
সূত্র জানায়, ভাসানচর এলাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ঝুঁকিমুক্ত। এখন দ্বীপটিতে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টি বিদেশিদের দেখাতে চাচ্ছে সরকার। সেই কারণে ঢাকার বিদেশি কূটনীতিকদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানান, ভাসানচার দ্বীপটি একেবারেই নিরাপদ। দ্বীপ দেখানোর লক্ষ্যে বিদেশি কূটনীতিকদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে।
তিনি আরো জানান, সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত ওমানের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে এক বৈঠকে ভাসানচর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের মধ্যে কাজ করতে দেশি বিদেশি গোষ্ঠী আগ্রহী হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে ২২টি এনজিও ভাসানচরে কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়া সিঙ্গাপুর ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের মাধ্যমে সাময়িকভাবে পুনর্বাসন করা হবে। তাদের চূড়ান্তভাবে মিয়ানমারেই ফিরে যেতে হবে। আর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘিঞ্জি পরিবেশ থেকে রক্ষার জন্য তাদের ভাসানচরে নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দুই দফায় ৩ হাজার ৪৪৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর ১ হাজার ৬৪২ আর ২৯ ডিসেম্বর ১ হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানো হয়। সেখানে পর্যায়ক্রমে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।