আজ শুক্রবার, ২৪শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ২রা রমজান, ১৪৪৪ হিজরি
আজ শুক্রবার, ২৪শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ২রা রমজান, ১৪৪৪ হিজরি

মিনিটে ১০ লিটার অক্সিজেন উৎপাদনের যন্ত্র তৈরি

যন্ত্র বিজ্ঞানী বগুড়ার মাহমুদুন্নবী বিপ্লব। করোনার এই দুঃসময়ে তিনি তৈরি করেছেন অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর যন্ত্র। এর দ্বারা মিনিটে ১০ লিটার আর প্রতি ঘণ্টায় ৬০০ লিটার অক্সিজেন উৎপন্ন সম্ভব এবং একসাথে একাধিক শ্বাসকষ্টের রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া যাবে।

গত জুনে যন্ত্রটি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক এ টু আই ইনোভেশন ল্যাবে প্রদর্শন করলে সেখানকার আয়োজকরা প্রশংসা করেছেন। যন্ত্রটি করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন যন্ত্র বিজ্ঞানী মাহমুদুন্নবী বিপ্লব।

এ সম্পর্কে বিপ্লব বলেন, আমাদের অক্সিজেনের ঘাটতি থাকায় করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সংকটে পড়েন। এসব চিন্তা করেই আমি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর যন্ত্র তৈরিতে কাজ শুরু করি, একসময় সফল হই। এর নাম দিয়েছি কে আর অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর। সময় লেগেছে প্রায় ১ মাস। খরচ পড়েছে ৭০ হাজার টাকা। যন্ত্রের সাহায্যে প্রতি মিনিটে ১০ লিটার আর প্রতি ঘণ্টায় ৬০০ লিটার অক্সিজেন উৎপন্ন করা যাবে।

৬০০ লিটার অক্সিজেন উৎপন্ন করতে প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ খরচ হবে ৩ টাকা। সেই অনুযায়ী প্রতি লিটারে এর দাম পড়বে ০.০০৫ পয়সা। এ যন্ত্রের সাহায্যে একাধিক শ্বাসকষ্টের রোগিকে অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব বলে তিনি জানান।

মাহমুদুন্নবী বিপ্লবের বাড়ি গাবতলীর পদ্মপাড়া গ্রামে। বর্তমানে বগুড়া শহরের সূত্রাপুরে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তিনি বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৯৪ সালে রেফ্রিজারেশন এবং এয়ারকন্ডিশনিং (পাওয়ার) বিভাগ থেকে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপর বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেই ১৯৯৬ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। সেখানে তিনি ২০০২ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন।

পলিটেকনিকে চাকরি করার পাশাপাশি বগুড়া শহরের শেরপুর রোডের সূত্রাপুর এলাকায় মেসার্স কাঁকন রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং ওয়ার্কশপ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে সেটিই তিনি পরিচালনা করে আসছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন যন্ত্র তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

ইতোমধ্যে প্রকৌশলী ও যন্ত্র বিজ্ঞানী মাহমুদুন্নবী বিপ্লব বেশ কয়েকটি যন্ত্র তৈরি করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তার উদ্ভাবিত যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এসির পরিবর্তে ব্যবহারযোগ্য ‘ডিসি ভেন্টিলেশন সিস্টেম’, বন্যাপূর্ব সতর্কীকরণ যন্ত্র, ‘বেবি ইউরিন অ্যালার্ম বেড’, রোগীর দেহে পুশ করার ‘স্যালাইন অ্যালার্ম সিস্টেম’, জলজ প্রাণিদের জন্য পানিতে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ‘ওয়াটার অ্যারোয়েটর’, করোনা প্রতিরোধে অটোমেটিক স্যানিটাইজিং যন্ত্র, প্যারালাইজড রোগীদের ব্যবহারের জন্য ‘অটোমেটিক হ্যান্ড এক্সারসাইজ’।

সর্বশেষ গুরুতর অসুস্থ রোগীদের নিবিড় পরিচর্যা ওয়ার্ডে (আইসিইউ) ব্যবহারের জন্য ভেন্টিলেটর, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরমধ্যে বন্যাপূর্ব সতর্কীকরণ যন্ত্রটি তৈরি করে তিনি ২০১৮ সালে বগুড়ায় ‘ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা’য় শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবকের পুরস্কার অর্জন করেন।

মাহমুদুন্নবী বিপ্লব আরও জানান, সম্প্রতি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক এ টু আই ইনোভেশন ল্যাবে অক্সিজেন উৎপাদনের যন্ত্র প্রদর্শনের আহবান করা হয়। এরপর গত জুনের ১৭ তারিখে যন্ত্র প্রদর্শনী হয়। সেখানে তার উদ্ভাবিত কে আর অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটরসহ বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত অক্সিজেন উৎপাদনের যন্ত্র, পাবনার ঈশ্বরদীর সরকারি সারা মাড়োয়ারী মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তাহের মাহমুদ তারিকের যন্ত্রসহ মোট ৬টি যন্ত্র প্রদর্শন করা হয়। সেখানে তার যন্ত্রের প্রশংসা করেন আয়োজকরা।

এ সম্পর্কে মাহমুদুন্নবী বিপ্লব বলেন, বাতাস থেকে যন্ত্রটি ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ বিশুদ্ধ অক্সিজেন উৎপাদনে সক্ষম। তার এই যন্ত্রটি বেশ কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। অক্সিজেন উৎপন্নের জন্য প্রথমে এটি প্রাকৃতিক বাতাস গ্রহণ করে। এরপর যন্ত্রের মাঝে থাকা মনিটরিং সিস্টেমের সাহায্যে বাতাসের মাঝে থেকে নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেনকে আলাদা করে। নাইট্রোজেন আদালা করার পর সেটিকে বাতাসে বের করে দিয়ে অক্সিজেন সংগ্রহ করে। এভাবে অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। পরে সেই অক্সিজেনকে কাজে লাগানো যায়। নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেন আলাদা করার জন্য যন্ত্রটির মাঝে জিওলাইট কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে। যন্ত্রের আকারের উপর জিওলাইটের পরিমাণ নির্ভর করে। তার তৈরি যন্ত্রের জন্য ২ লিটার জিওলাইট ব্যবহার করছেন।

তিনি জানান, তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চান। এজন্য তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা চান।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (ফরেনসিক মেডিসিন) ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, মাহমুদুন্নবী বিপ্লবের উদ্ভাবিত অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর যন্ত্রটি তিনি দেখেছেন। যন্ত্রটি আসলেই রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহের ক্ষেত্রে খুব কার্যকর হবে। মানুষের অক্সিজেন স্যাচুরেশন যদি ফল করে ৯০ এর কাছাকাছি আসে বা ৯৫ এর নিচে আসে, তখন অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। ৮০ শতাংশ স্যাচুরেশনও এই অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর সাপোর্ট দিতে পারবে বলে আমি মনে করি। কোনো ব্যক্তির যদি অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৫ থেকে ৯০ শতাংশে নেমে আসে, তখন তার প্রতি মিনিটে ১ লিটার করে অক্সিজেন লাগে। সেক্ষেত্রে এই যন্ত্র দিয়ে একসাথে একাধিক ব্যক্তিকে অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব।

শেয়ার করুন
Share on Facebook
Facebook
Pin on Pinterest
Pinterest
Tweet about this on Twitter
Twitter
Share on LinkedIn
Linkedin